মোঃ ফেরদৌস মোল্লা পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে একদিকে দূরে সরে যাচ্ছেন আপনজন, অন্যদিকে ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে একাকার হচ্ছেন মানুষ। বৈশ্বিক এই মাহামারির কারণে মানুষের এমন নিদর্শন পাওয়া গেছে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে। এবার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল ভান্ডারিয়ায়।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল ৪ টায়া করোনা আক্রান্ত চিত্তরঞ্জন সাহা (৫৮) নামে এক ব্যক্তি। মৃত্যুর পরে ভয়ে স্বজনের কেউ এগিয়ে আসেননি । খবর পেয়ে ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিম সকল ধর্মীয় রিতিনীত পালন করে মৃতদেহের সৎকার করে।
চিত্তরঞ্জন সাহা বাড়ি পাশ্ববর্তী রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাসকাঠী গ্রামে। বিকালে মৃতদেহ নিয়ে বড়িতে রওনাদিলে তৈরি হয় নতুন বিপত্তি। করোনা ছড়ানোর আতঙ্কে মৃত দেহ বাড়িতে প্রবেশ করতে দিতে রাজি নন বাড়ি অন্য সদস্যরা। পরে মেডিকেল টিমের সদস্যরা ভান্ডারিয়া সরকারি শ্মশানে হিন্দু রীতিতেই সৎকার করে ।
চিত্তরঞ্জন সাহার স্ত্রী তারারানী সাহা জানান, করোনার কারণে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা ছড়ানোর আতঙ্কে মৃত দেহ বাড়িতে আনতে দিতে রাজি হয়নি বাড়ির লোকজন। একবারের জন্য মৃতদেহ দেখতেও আসেননি। সৎকারের সময়ও তারা ছিলেন না। তিনি বলেন, হাসপাতালের লোকজন কাঁধে করে আমার স্বামীর মৃতদেহ বহণ করেছেন।
চিত্তরঞ্জন সাহা বাড়ি সদস্য গৌতম সাহা জানান, আমাদের বাড়িতে দশ জন ৫০ উর্ধ্ব সদস্য রয়েছেন। করোনা ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় করোনা ছড়ানোর আতঙ্কে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেনারেল যে শ্মশানঘাট আছে সেখানে দাফন করান জন্য।
মেডিকেল টিমের সদস্য তুহিন তালুকদার শামীম জানান, একজন সনাতন ধর্মের লোক ভান্ডারিয়া হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যায়। মৃতদেহের সৎকার করার মতো তেমন কেউই ছিলোনা। সাথে তার স্ত্রী ছিলো, আমরা মেডিকেল টিমের ৫ জন সদস্য মৃতদেহ নিয়া শ্মশানে যাই, শ্মশানে যাওয়ার পথ খুবই খারাপ কাদা, হাটু সমান পানি ও জঙ্গলের ভিতর দিয়া খুব কষ্ট করে মৃতদেহ নিয়া শ্মশানে পৌঁছাই। তার ছেলে সেখানে উপস্থিত ছিলো। একবারের জন্য হলেও কেউই লাশের স্টেচার ছুয়ে দেখেনি। লাশের তো সৎকার করতেই হবে, আমরা সবাই ছিলাম মুসলিম ধর্মের আর মৃতদেহ ছিলো হিন্দু ধর্মের, এ এক কঠিন পরীক্ষা ছিলো আমাদের সদস্যদের মাঝে। হিন্দু রীতিনীতে মেনে কবর খুড়ে মাটিচাপা দেওয়াটা আমাদেরই করতে হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ননী গোপাল রায় সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মো. তুহিন তালুকদার শামীম, মো. মুসা গাজী,আসাদুজ্জামান,পরাগ হোসেন ও নাইম নামের আমাদের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা মৃতের লাশ কাঁধে করে শশ্মানে নিয়ে মৃতের স্ত্রী’র উপস্থিতিতে ধর্মীয় রিতি মেনে তার ছেলে মুখাগ্নি করার পরে মৃতের লাশ দাফন সম্পন্ন করে।