20.5 C
Bangladesh
Friday, November 15, 2024
spot_imgspot_img
Homeআইন ও আদালতঅনৈতিকভাবে ইজারাদারের নামে ভান্ডারপুর হাটে খাজনা আদায়

অনৈতিকভাবে ইজারাদারের নামে ভান্ডারপুর হাটে খাজনা আদায়

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ

নওগাঁর বদলগাছীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যোগসাজছে কোলা ইউনিয়নের ভান্ডারপুর হাটের খাস আদায় গোপন রেখে ইজারাদার না হয়েও মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা দিং ইজারাদার
নামীয় রশিদ দিয়ে খাজনা আদায় করছে।
এলাকাবাসী ও সাংবাদিকদের চোখে ধোকা দিতেই এই প্রথা অবলম্বন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন কোন স্বার্থে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরে হাটের দরপত্র আহব্বান করলেন না।
সরেজমিনে ভান্ডারপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে খাজনা আদায় করছে আয়েশা সিদ্দিকা দিং এর লোকজন। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত খাজনা। হাটের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে খাজনা আদায়কারী বেদারুল নামীয় একজন ব্যক্তি। খাস হাটে অতিরিক্ত খাজনা কেন নেওয়া হচ্ছে আদায়কারী বেদারুলকে প্রশ্ন করলে প্রথমে তিনি বলেন, আমরা হাটটি ইজারা নিয়েছি তাই আমাদের লোকজন দিয়ে ইচ্ছে মতোই খাজনা আদায় করবো।
আমরা দুই তিন দিন আগে জানতে পারি যে এই হাটে খাস আদায় হচ্ছে তাহলে খাস আদায় হাটে ব্যক্তি ইজারাদারের রশিদ কেন ব্যবহার হচ্ছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, খাস আদায়ের
জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের
নিকট থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। পহেলা বৈশাখ থেকে তাদেরকে টোল আদায়ের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তার পরার্মশেই ব্যক্তি রশিদে খাজনা আদায় করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইজারাদারের আরেক অংশীদার বলেন, এই হাট নিতে নগদ ২৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে ইউএনওকে। আর এই হাটটি পেতে সংশ্লিষ্টদের দিতে হয়েছে আরো প্রায় ৭ লাখ
টাকা। এই হাটটি নিতে আমাদের মোট খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। জানা যায়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের
জন্য ভান্ডারপুর হাট ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র ক্রয় করেন ৪/৫ জন ব্যক্তি। আর সেই সব ক্রয়কৃত
সিডিউল আওয়ামীলীগের এক নেতা জমা নিয়ে নেন। পরে ঐ নেতা প্রায় ১৪ লাখ টাকা ইজারা
মুল্য দিয়ে মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা দিং এর নামে মাত্র একটি দরপত্র দাখিল করে। সরকারি মূল্যের
চেয়েও ৫০% এর কম মূল্যে দরপত্র দেওয়ায় ও একটি মাত্র দরপত্র দাখিল হওয়ায় দরপত্রটি বাতিল করা হয়। এরপর
ঐ হাটের জন্য আর কোন দরপত্র আহব্বানে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন।
পরে কোনও প্রকার দরপত্র আহ্বান না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
আলপনা ইয়াসমিন আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের নিকট থেকে খাস আদায়ের জন্য অগ্রিম ২৩ লাখ
টাকা নিয়ে ১৪২৮ সনের পহেলা বৈশাখ থেকে খাস আদায়ের দায়িত্ব দেন তাদেরকে। উপজেলা
নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশে খাস আদায় গোপন করে আয়েশা সিদ্দিকা দিং
নিজেদেরকে ইজারাদার হিসেবে রশিদ বই ছাপিয়ে অবৈধভাবে ভান্ডাপুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা
আদায় করছে।
কোলা ইউনিয়নের সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, কোলা ইউনিয়নের দুইটি হাট। একটি
হলো কোলা অপরটি ভান্ডারপুর। কিন্তু বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই উপজেলায়
যোগদানের পর কোন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে এই দুইটি হাট নিয়ে ভেলকিবাজির
মতো খেলা করছেন। আর এই দুইটি হাট টেন্ডার না দিয়ে নিজেদের স্বার্থে খাস আদায়
করছে। আর এতে করে এই ইউনিয়নের হাট-বাজারের উন্নয়ন থমকে গেছে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়
তাহলে এলাকার উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। তারা এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা
করেছেন।
ইউনিয়ন হাট কমিটির সভাপতি ও কোলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহিনুর
ইসলাম (স্বপন) এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গত ৪ ফেব্রæয়ারী ২০২১ ইং তারিখে ১৪২৮বঙ্গাব্দের জন্য প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভান্ডাপুর হাট ইজারা নেওয়ার জন্য মোছাঃ
আয়েশ সিদ্দিকা দিং প্রায় ১৪ লাখ টাকা ইজারা মূল্য দিয়ে মাত্র একটি দরপত্র দাখিল করে। কিন্তু
সরকারি মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেওয়ায় এবং একটি মাত্র দরপত্র দাখিল হওয়ায় বদলগাছী উপজেলা
হাট-বাজার ইজারা কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
তা জেলা প্রশাসকের নিকট প্রেরণ করেন। জেলা প্রশাসক এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ৩০ লাখ
টাকা নির্দ্ধারণ করে দেন বলে শুনেছিলাম। এরপর থেকে ইজারাদারের মাধ্যমেই হাটে টোল আদায়
করা হচ্ছে বলে আমি জানি। পরে গত কুরবানী ঈদের ৩/৪ দিন আগে পরিষদের সদস্যদের বকেয়া
সম্মানী ভাতা দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রধান অফিস সহকারী রেজাউল
ইসলামের কাছে চেক নিতে গেলে তিনি বলেন, ভান্ডারপুর হাটে খাস আদায় করা হচ্ছে তাই এই
পর্যন্ত অল্প কিছু টাকা জমা হয়েছে। আপনি ইউএনও স্যারের ক সাথে কথা বলেন। এরপর ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন এর নিকট গেলে তাকে বলেন, ভান্ডাপুর হাট খাস আদায় হচ্ছে তাই এখন
৪৬% টাকা দেওয়া যাবে না বলে তাকে জানান। এরপর থেকে তিনি অবগত হয়েছেন ভান্ডারপুর
হাট খাস আদায়ে চলছে। কারা এই খাস আদায় করছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আয়েশা সিদ্দিকা দিং আদায় করছে।
কোলা, আধাইপুর ও বদলগাছী সদর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শ্রী রনজিৎ কুমারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ভান্ডাপুর হাটে খাস আদায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। এছাড়াও তিনি জানান ইউএনও স্যার কার দ্বারা খাস আদায় করাচ্ছেন তাও তিনি জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ২৩ লাখ টাকা আয়েশা সিদ্দিকা দিংদের নিকট থেকে জামানত হিসেবে নিয়ে সরকারি হিসাব নম্বরে রেখেছি এবং খাস আদায়ের জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। আয়শা সিদ্দিকা দিং
ইজারাদার লিখে রশিদ বই ছাপিয়ে তা দিয়ে টোল/খাজনা আদায় করছে কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদেরকে ডেকে ঐ রশিদ বইয়ে খাস আদায়ের সিল দিতে বলে দিবো। ২৩ লাখ টাকা জামানত নেওয়ার পর প্রতি হাটের খাস আদায়ের টাকা সরকারি কোষাগারে কিভাবে জমা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর প্রদান করেননি।#

Most Popular

Recent Comments