শফিকুল ইসলাম(এমএ)
স্টাফ রিপোর্টারঃ-
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সরকারী অনুমোদনহীন ‘রেড ক্রিসেন্টার’ নামে একটি মাতৃ সদন ক্লিনিক ডেলিভারি করাতে গিয়ে আয়াদের গাফোলতির কারণে গর্ভের সন্তানসহ প্রসুতি মা’য়ের মৃত্যু হয়েছে। ক্লিনিক সিলগালা করে অভিযুক্ত দুই আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। হাসপাতাল থেকে প্রসুতির লাশ উদ্ধার করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ও ওসি মাে. গােলাম ছরােয়ার।
হাসপাতাল, পুলিশ, নিহতের স্বামী ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায় , উপজেলার দক্ষিণ চাঁত্রীশিরা গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক মন্টু বাহাদুরের স্ত্রী সীমা বেগমের (৩৫) চতুর্থ সন্তানের প্রসব বেদনা শুরু হলে সােমবার সকাল সাতটার দিকে তাকে পশ্চিম বাগধা রেড ক্রিসেন্ট মাতৃ সদন ক্লিনিকে নেয়া হয়। সীমা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী।
সরকারী অনুমোদন বিহীন ওই ক্লিনিকে কােন রেজিষ্ট্রার চিকিৎসক না থাকার পরেও সেখানে কর্মরত আয়া স্থানীয় ফারুক হােসেন মিয়ার স্ত্রী রাশিদা বেগম ও মান্নান খানের স্ত্রী মায়া বেগম সকাল সাড়ে নয়ঘটিকার দিকে সন্তান সম্ভবা সীমা বেগমের ডেলিভারী করাতে গিয়ে গর্ভের সন্তানসহ সীমার মৃত্যু হলে বিষয়টি সীমার স্বজনদের কাছে গােপন রেখে সীমাকে অন্যাত্র নিয়ে ডেলিভারী করার কথা বলে ওই আয়ারা দ্রুত সটকে পরে।
সীমার ভ্যান চালক স্বামী মন্টু ক্লিনিকের আয়াদের কথানুযায়ী দ্রুত সীমাকে পয়সারহাট আদর্শ জেনারল হাসপাতালে নিলে সেখানের চিকিৎসকরা সীমাকে দ্রুত উপজলা হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সীমার অসহায় স্বামী তাকে নিয়ে উপজেলা ৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরতো চিকিৎসক ডা. মামুন মােল্লা সীমাকে মৃত ঘােষণা করেন।
খবর পেয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার ও থানা অফিসার ইনচার্জ মাে. গােলাম ছরােয়ার হাসপাতালে ছুটে যান। সেখান গিয়ে তারা ময়নাতদন্তের জন্য নিহত সীমার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
এর পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার, থানার ওসি ও পুলিশ অফিসারদের নিয়ে ঘটনাস্থল ও ক্লিনিক পরিদর্শনে গিয়ে সেখানের অভিযুক্ত দুই আয়া রাশিদা বেগম ও মায়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
ডা. মামুন মােল্লা জানান, তার কাছে আসার পর সীমার কােন পালস্ তিনি পাননি। তাই তাকে কােন চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। প্রসব জনিত কারনে সীমার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে ময়নাতদন্তর রিপাের্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন জানান, উপজেলায় যতগুলাে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে তার তালিকায় ‘রেড ক্রিসেন্ট মাতৃ সদন’ ক্লিনিকের নাম নেই। সরকারী কোন অনুমোদন ছাড়া কিভাবে তারা রােগী ভর্তি ও চিকিৎসা প্রদান করেন তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ওই ক্লিনিকের কাগজ পত্রসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য পুলিশসহ স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদারকে পাঠানাে হয়েছে। তিনি ফিরে এসে রিপোর্ট দেয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। অভিযােগের কাগজপত্র না থাকার কারণে কথিত ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সুকলাল সিকদার রেড ক্রিসেন্টের নামে পরিচালিত ওই ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে জানান, সেখানে ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কােন কাগজপত্র বা কােন লােকজন পাওয়া যায়নি। দুই জন আয়াকে পাওয়া গেছে, তাদের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
থানা অফিসার ইনচার্জ মােঃ গােলাম ছরােয়ার উপজেলা হাসপাতাল ও কথিত রেড ক্রিসেন্ট ক্লিনিকের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রসবের ঘটনায় সীমা বেগমের মৃত্যুর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সাথে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দুই আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এঘটনায় নিহত গৃহবধূ সীমার স্বামী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গােলাম ছরােয়ার।