28 C
Bangladesh
Thursday, November 21, 2024
spot_imgspot_img
Homeউদ্যোক্তাআত্রাইয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রেলগেট নির্মাণ করে গেটকিপার দুই বন্ধু

আত্রাইয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রেলগেট নির্মাণ করে গেটকিপার দুই বন্ধু

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ ঃ

নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের অর্থায়নে রেলগেট নির্মাণ করে দিন-রাত নিরলসভাবে গেটকিপারের দায়িত্বপালন করছেন আনোয়ার হোসেন নামের এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ও তার বন্ধু মামুন।

দু‘জনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও দুর্ঘটনা থেকে পথচারীদের রক্ষা করতে স্বেচ্ছাশ্রমে পড়াশুনার পাশাপাশি এ কাজটি বেছে নিয়েছেন তারা।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতি উপজেলার শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমপাশ দিয়ে তৈরি নবনির্মিত “আঞ্চলিক মহাসড়ক” বিনোদন প্রেমীদের নতুন স্পটে পরিণত হয়েছে।

যার ফলে প্রতিদিন এ মহাসড়কে শত শত বিনোদন প্রেমীরা ঘুরতে আসে। আবার তারা অনেকেই রেল লাইনের পূর্ব পাশে দর্শনীয় বেরাহোসেন বড় মসজিদ দেখতে এবং এ সড়কের সাথে সম্পৃক্ত রেবাহোসন, শিমুলিয়া, পোতা, তেঘর, জামগ্রাম, তিলাবাদুরি, ভোঁপাড়া গ্রামের হাজার হাজার লোকের শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশন ও আত্রাই উপজেলা সদরসহ নওগাঁ-শান্তাহার শহরের সাথে যোগাযোগের এক মাত্র সংযোগ সড়ক।

আর এ সড়ক দিয়ে রেল লাইন পারাপারে এক মাত্র পথ হওয়ায় এবং এ স্থানে কোন রেলগেট না থাকায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। ঠিক এ দুঃসময়ে শিমুলিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও পাশ্ববর্তী বেরাহোসন গ্রামের মামুন যাত্রীদের রেললাইন পারাপারে বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

তারা দুই বন্ধু নিজ উদ্যোগে নিজ খরচে রেল লাইনের দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের দু‘পাশে বাঁশ দিয়ে গতিরোধক ব্যারিয়ার তৈরি করে রোদ বৃষ্টির মাঝে তারা স্বেচ্ছাশ্রমে গেটকিপারের কাজ করে চাচ্ছে।

কিন্তু প্রখর রোদ আর বৃষ্টির মাঝে কাজ করলেও তাদের বিশ্রাম ও রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে নেই কোন মাথাগোজার ছাউনি।আনোয়ার ও মামুন দরিদ্র পরিবারের ছেলে। পরিবারের মধ্যে বাবার পাশাপাশি তাদেরকেও সংসারের হাল ধরতে হয়।

এরপরও থেমে নেই তাদের অদম্যতা। আনোয়ার রেলক্রসিংয়ের গেট কিপারের কাজের পাশাপাশি আত্রাই মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছে।

সরেজমিনে আনোয়ার হোসেনের ও মামুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের সাথে রয়েছে শাহাগোলা ও আত্রাই গেট কিপারদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ। তাদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিনিয়ত ট্রেন আসার আগেই গতিরোধক ব্যারিয়ার সিগন্যাল ফেলে শতশত স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বিনোদন প্রেমীপথচারীদের যানমাল রক্ষা করছেন তারা।

তারা আরও জানান, মাঝে মধ্যেই পত্র-পত্রিকাসহ গণমাধ্যমে শোনা যায় রেল লাইন পারাপারে একের পর এক দুর্ঘটনার কথা। এ কথা মাথায় রেখেই তারা দু‘জন নিয়মিত গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছে। সকাল, দুপুর ও রাতে প্রায় নির্দিষ্ট সময়ে এ রেলপথ দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি এ কাজটি বেছে নিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ছাইফুল ইসলাম জানান, ট্রেন দুর্ঘটনার হাত থেকে সবাইকে বাঁচাতে দুই বন্ধুর এ উদ্যোগ আসলেই প্রসংশনীয়। এখানে একটি স্থায়ী রেলগেট প্রয়োজন বলেও তিনি মনেকরেন।

এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, আনোয়ার হোসেন ও মামুনের নিজ উদ্যোগে ব্যারিয়ার নির্মাণ করে স্বেচ্ছাশ্রমে গেট কিপারের দায়িত্বপালন করতে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। সেখানে স্থায়ী একটি রেলগেট প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

তিনি আরো বলেন, তাদের দুই বন্ধুর পছন্দের এই চাকরিটা স্থায়ী হলে দরিদ্র পরিবারের দুঃখ লাঘব হতো। তাই আমি রেল ডিপার্টমেন্টের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের শান্তাহার সিনিয়র সাব-এসিষ্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. আফজাল হোসেন বলেন, শাহাগোলা-মাধাইমুড়ি মাঝামাঝি স্থানে রেল লাইন পারাপারের জন্য জনগণের সুবিধার জন্য একটি অস্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবর একটি আবেদন করলে সেখানে স্থায়ী রেলগেট নির্মাণ করা সম্ভব বলেও তিনি জানান।

Most Popular

Recent Comments