বরগুনা প্রতিনিধি।
করোনা ভাইরাসের সুযোগে আমতলীর পৌর এলাকার প্রধান বাজারসহ গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারগুলোতে রূপচাঁদা মাছ হিসেবে বিক্রি করছে নিষিদ্ধ ভয়ানক ও রাক্ষুসে পিরানহা। দাম কম বলে সাধারণত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ এই মাছের ক্রেতা। অথচ এ মাছটির ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে সরকারিভাবে আইন করে পিরানহা মাছ চাষ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ এ মাছটি যাতে কেউ চাষ বা বিক্রয় করতে না পারে তা তদারকির দায়িত্ব রয়েছে মৎস্য বিভাগের। কিন্তু আমতলী উপজেলা মৎস্য অফিস এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকায় ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে পিরানহা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমতলী উপজেলার চুনাখালী বাজার, বাদুরা বাজার, গাজীপুর বাজার, গুলশাখালী বাজার, কলাগাছিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও রাস্তায় বসে এই মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। শুধু পিরানহা নয়, বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুরও। বাজারে দিনমজুর মো: ফয়সাল এসেছিলেন মাছ কিনতে। মাছের কেজি কত জানতে চাইলে বিক্রেতা তাকে বলেন, একদম তাজা সামুদ্রিক চান্দা ১৬০ টাকা কেজি। দরদাম করে হামিদ কিনলেন ১৫০ টাকা কেজিতে।
কী মাছ কিনলেন, জানতে চাইলে ফয়সাল উত্তর দিলেন সমুদ্রের চান্দা। তাকে যখন বলা হলো এটা চান্দা নয়, রাক্ষুসে পিরানহা, তিনি সে কথায় কান না দিয়ে দ্রুত হাঁটা দিলেন।
তাৎক্ষণিক উপস্থিত জনতার সামনে ২ নং কুকুয়া ইউনিয়ন আনসার বাহিনীর কমান্ডার বাবলু, নিষিদ্ধ রাক্ষসী পিরানহা মাছ বিক্রিতে বাধা দেন। ওখানেই জনসাধারণের মধ্য উপস্থিত সবাইকে জনসচেনতা সৃষ্টি করে।
মাছ বিক্রেতা মোঃ জাকির হোসেন কাছে জানতে
চাইলে ক্রেতাদের কাছে মিথ্যা কথা বলছেন রূপচাঁদা বলে পিরানহা বিক্রি করছিলেন। কেন, বিক্রেতা হাঁসলেও কোনো সদুত্তর দেননি। তবে তিনি জানান, আমতলী পটুয়াখালী বাধঘাট ও প্রশাসনের সামনেইই বিক্রি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ব্যবসায়ী জানান, মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই পিরানহা মাছ রূপচাঁদা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে তদারকি না থাকায় মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ নিয়ে কোনও সচেতনতা নেই। কর্তৃপক্ষ কোনও তথ্যই জানায় না।
তারা অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য অফিসের লোকজন কোনও অনুষ্ঠানেই আমাদের ডাকেন না। মাঠ পর্যায়ে তাদের কোনও কর্মকাণ্ডই আমরা দেখি না। মাঝে মাঝে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও তা অফিস পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। মাছচাষী, ব্যবসায়ী বা সাধারণ জনগণ কেউ জানেন না। যত রকম প্রচার প্রচারণা ও অনুষ্ঠান হয় তা শুধুমাত্র উপজেলা চত্বরে হয়ে থাকে। তাছাড়া এ মাছগুলো নিষিদ্ধ হলে তা আমদানি হচ্ছে কীভাবে এমন প্রশ্নও করেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য অফিসের তদারকি না থাকায় দিন দিন নিষিদ্ধ এ মাছের বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণ রূপচাঁদা মাছ মনে করে নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত মাছটি অবলীলায় কিনে খাচ্ছেন। এর ফলে তারা অজান্তেই চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
আমতলী মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, আমতলীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭ টি বাজার রয়েছে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর যাতে বাজারে বা কোনো এলাকায় বিক্রি করতে না পারে তারা সেই চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও মাঝে মাঝে তারা অভিযান পরিচালনা করেন
উল্লেখ্য ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পিরানহা এবং ২০১৪ সালের জুন থেকে আফ্রিকান মাগুরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের। অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা জীববৈচিত্র্যের জন্য এগুলো হুমকিস্বরূপ। এ কারণে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, উৎপাদন, বংশ বৃদ্ধিকরণ, বাজারে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।