আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া হতদরিদ্রদের স্বপ্নের ঘর বড় লোকের ভিটায় নির্মাণ করা হয়েছে। ইউএনও’র কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ এনামুল হক বাদশার ১৪ ধনাট্য স্বজন পেলেন ওই ঘর। এলাকাবাসীর অভিযোগ ইউএনও’র প্রতিনিধি মোঃ সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজীকে ঘরপ্রতি ২০ হাজার টাকা দিলেই মিলে ঘরের নির্মাণ সামগ্রী। টাকা না দিলে মিলছে না নির্মাণ সামগ্রী। এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রæত তারা তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। এদিকে ঘরের তালিকায় অনিয়নের অভিযোগ এনে ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক কামাল রাঢ়ী বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান ঘরের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, উপকারভোগীদের তালিকা দ্রæত প্রকাশ করতে ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানাগেছে,প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এ অধীনে দ্বিতীয় ধাপে আমতলী উপজেলায় হতদরিদ্রদের জন্য ৩’শ ৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই প্রকল্পের গুলিশাখালী ইউনিয়নে ৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেন ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান। ওই ঘরগুলোর মধ্যে ইউএনও কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ এনামুল হক বাদশার নিজ গ্রাম হরিদ্রবাড়িয়ায়ই পেয়েছে ৩০টি। তার মধ্যে ১৪ টি ঘর পেয়েছেন মোঃ এনামুল হক বাদশার আত্মীয়। তারা সকলেই ধনাট্য ব্যাক্তি।
অভিযোগ রয়েছে, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামানের দুইজন প্রতিনিধি সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজী ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা আদায় করে এনামুলের মাধ্যমে ইউএনও হাতে পৌছে দেয়। যারা টাকা দেন তাদের বাড়ীতেই পৌছে যায় ঘর নির্মাণ সামগ্রী। টাকা না দিলে তালিকায় নাম থাকলেও নির্মাণ সামগ্রী যাচ্ছে না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ইউএনও কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ এনামুল হক বাদশার মামাতো ভাই নিজাই জোমাদ্দার, ওবায়দুল জোমাদ্দার, শহীদুল জোমাদ্দার, সোহেল জোমাদ্দার, ভগ্নিপতি মোঃ ফকু হাওলাদার, ফুফাতো ভাই ফোরকান, চাচা সেরাজ মৃধা, বেয়াই রাহাত তালুকদার, হাবিব গাজী, সেলিম গাজী, চাচাতো ভাই নাশির গাজী, জাকির গাজী, নুর জামাল গাজী ও আলাউদ্দিন গাজী ধনাট্য হয়েও ঘর পেয়েছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া ওই গ্রামের অন্য ১৬ টি ঘর যারা পেয়েছেন তারাও এনামুল হক বাদশার আত্মীয় স্বজন। একই গ্রামে ৩০ টি ঘর নির্মাণ এবং ধনাট্য ব্যাক্তিরা ঘর পাওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রæত সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ঘর পরিদর্শনে এসে এলাকাবাসীকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি তার প্রতিনিধি সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজীকে নির্দেশ দিয়েছেন যারা ঘর নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলেছে তাদের দেখিয়ে দেয়ার। ওই নির্দেশের ধারাবাহিকতায় সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজী এলাকার মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এদিকে ঘরের তালিকা নির্মাণে অনিয়ম ও টাকা ছাড়া ঘর মিলছে না এমন অভিযোগ এনে ওই গ্রামের ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল রাঢ়ী বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ইউএনওকে ২০ হাজার টাকা দিলেই মিলছে ঘর। হতদরিদ্ররা টাকা দিতে পারেনি তাই তারা ঘর পায়নি। ইউএনও’র প্রতিনিধি সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজী টাকা উত্তোলন করে মোঃ এনামুল হক বাদশাকে দেন। তারা আরো বলেন, হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামে ৩০ টি ঘর পেয়েছেন। ওই ঘরের মধ্যে ১৪টি ঘর এনামুল হক বাদশার নিকটাত্মীয়। বাকীরাও তার আত্মীয়। তারা আরো বলেন, এনামুল হক বাদশার ১৪ আত্মীয় স্বজনই বনাট্য ব্যাক্তি। তাদের জমি ও পাকা ঘর রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন বলেন, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান শুক্রবার ঘর নির্মাণ পরিদর্শনে এসে ঘর নির্মাণের অনিয়মের বিষয়ে যারা কথা বলবে তাদের দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ওই গ্রামের এতিম হতদরিদ্র ইমরান বলেন, আমি এতিম হয়েও একটি ঘর পেলাম না। যারা ঘর পেয়েছেন তারা সকলেই ধনাট্য ব্যাক্তি। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজী ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি টাকা দিতে পানিনি তাই ঘর পাইনি।
ওই গ্রামের জাহাঙ্গির সিকদার, শানু আকন ও রুস্তুম মাষ্টার বলেন, ইউএনও কার্যালয়ের এনামুল হক বাদশা টাকা নিয়ে ঘর দিয়েছেন। তারা আরো বলেন, এই গ্রামে যারা ঘর পেয়েছেন তারা সকলেই ধনাট্য ব্যাক্তি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানান তারা।
এ বিষয়ে ইউএনও’র প্রতিনিধি মোঃ সুজন মুসুল্লী বলেন, ইউএনও নির্দেশে ঘরের নির্মাণ কাজ তদারকি করছি।
কামাল রাঢ়ী বলেন, ঘরের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও টাকা নেয়ার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী মোঃ এনামুল হক বাদশা তালিকা ও টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, যথা নিয়মেই ঘরের নির্মাণ কাজ হচ্ছে।
ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, অফিস সহকারী এনামুল হক বাদশার আত্মীয় স্বজনকে ১৪ টি ঘর দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। ঘরের তালিকার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে না জানিয়ে তালিকা তৈরি করছেন ইউএনও। তিনি আরো বলেন, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান তার অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এনামুল হক বাদশার যোগসাজসে টাকার বিনিময়ে ধনাট্য ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।