জাহিদুল ইসলাম জাহিদ,কুয়াকাটা-কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :-
মায়ের আকুতি কান্নায় ১৩ বছর ভিজিয়েছে কুয়াকাটার সাদা বালু, ছেলেকে কাছে পাওয়ার আশা, বুকে ধারণ করে তাকিয়ে থাকতো গভীর সমুদ্রের দিকে,আজ সেই মায়ের আশা পূর্ণ হয়েছে, হারানো ছেলেকে কাছে পেয়ে খুশির কান্নাও কেঁদেছে তিনি।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর দীর্ঘ ১৩ বছর পরে মিলন আকন (৩০) নামের এক যুবককে ফিরে পেয়েছে তার পরিবার। এই খবরটি মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে কুয়াকাটায।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুর ১ টার দিকে নিখোঁজ মিলনকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবার। এর আগে গত দুইদিন আগে এক আত্নীয়’র মাধ্যমে শুনতে পারে পাশ্ববর্তী জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলায় তাঁকে রাস্তায় পাগল বেশে দেখতে পেয়েছে।
পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার সকালে তালতলীতে গিয়ে মিলনের মা মিনারা বেগম ও ভাই রুবেল আকন, তার পরিচয় নিশ্চিত করে সমুদ্র পথে ট্রলারযোগে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ফিরে আসা মিলন আকন, কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের শাহ-আলম আকনের বড় ছেলে।
মাঠ পর্যায়ে গিয়ে রশিদ হাওলাদার নামে এক জেলে বলেন, একি সমুদ্রে আমরা মাছ ধরতাম, হঠাৎ প্রচণ্ড ঝড়ে সাগর উত্তাল থাকায় মিলন সহ আরো দুজনকে আমরা হারিয়ে ফেলি। অনেক বছর কাটিয়ে গেলেও এবং তার নিজের থাকা বসতবাড়ি সমুদ্রের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে, তারপরও দেখা মেলেনি মিলনের। আজ হঠাৎ করে শুনতে পারি যে মিলন বেঁচে আছে এবং তাকে তার পরিবার বাসায় নিয়ে এসেছে, শুনে তরতর করে দেখতে চলে এসেছি।
মিলনের বাবা শাহ-আলম আকন বলেন, আমার ছেলে মিলন ২০০৮ সালে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিল। তার সাথে আরো ফারুক (১২), খোকন (২৫) নামে দু’জন ছিল কেউই ফেরেনি, অনেক খোঁজা খুজি করেছি তাদেরকে। হঠাৎ দু’দিন হলো শুনতে পেয়েছি আমার ছেলে মিলনকে নাকি পাওয়া গেছে তালতলী। পরে ওর মা গিয়ে নিয়ে আসছে এবং এটা যে আমার ছেলে তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।
মিলনের মা মিনারা বেগম জানান, আমার সোনার টুকরা ছেলেকে আমি দীর্ঘ ১৩ বছর পর আমার বুকে ফিরে পেয়েছি। আমি অনেকদিন এই সাগর পারে পারে ছেলের খোঁজে দিন কাটিয়েছি। আজ আমার আর কোনোকিছু চাওয়ার নেই, আমার ছেলেটা এখন মানসিক অসুস্থ। আমি এখন ওরে চিকিৎসা করাবো তার ও সুস্থ হলে বলতে পারবো ও এতদিন কোথায় ছিল।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির শরীফ জানান, আমার ওয়ার্ডের মিলন নামের একটি ছেলে গত ‘০৮ সালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল, আজকে তাঁকে তার পরিবার তালতলী থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছে। তার বাবা, মা, পরিবারের লোক তার গায়ে থাকা যে কাটা দাগের কথা বলতেছে তা পুরোপুরি মিলছে এবং তার সাথে কাজকরা জেলেদের মাধ্যমে আমি মিলনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। তিনি আরো বলেন, মিলন আকন, এখন মানসিকভাবে অসুস্থ, ওপুরোপুরি সুস্থ হলে আমরা তার কাছ থেকে সকল বিষয় জানতে পারবো, সর্বশেষে কাউন্সিলর বলেন, আমি সব সময় তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি, এবং তাদের যদি কোনো সহযোগিতা লাগে সেই সহযোগিতার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।