আবুল হোসেন রাজু:
ভরা ইলিশ মৌসুম চললেও কুয়াকাটার ঝাউবন এলাকায় সমুদ্রে মাছ ধরতে না দেওয়ার অভিযোগে জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে খুটা জেলেরা বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ শেষে প্রেসক্লাবে এসে খুটা জেলে নৌকার ১৯ মাঝি ও মাল্লারা সাংবাদিকদের কাছে জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি সহ নানা অভিযোগ তুলে ধরে। এসময় তারা সীমানা নির্ধারণের নামে অতিনিক্ত টাকা আদায়, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্বজনপ্রীতি এবং জেলে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সমুদ্রে মাছ ধরতে না দেয়া সহ হয়রানীর অভিযোগ তুলে ধরে। ভূক্তভোগি জেলেরা আশার আলো জেলে ও মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির আওয়তায় গড়ে তোলা জেলে ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করার দাবী সহ দ্রæত সময়ে এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন।
জেলে সুত্রে জানা গেছে,আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুরবন হইতে গঙ্গামতি এলাকার খুটা জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরা সহ জেলেদের সমস্যা সমাধানের সুবিধার্থে ৬টি ইউনিট কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। প্রতিটি ইউনিট কমিটির আওতায় ৭০ থেকে দেড় শতাধিক খুটা জেলে নৌকা রয়েছে। আশার আলো জেলে সমবায় সমিতি কর্তৃক গড়ে তোলা এসব ইউনিট কমিটি সমুদ্রে মাছধরার জন্য সীমানা নির্ধারণ,কোন জেলে সমুদ্রের কোন স্থানে মাছ শিকার করবে তা নির্ধারণ করে থাকে। এসব ইউনিট কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে সীমানা নির্ধারণের নামে নৌকা প্রতি ৩’শ-থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছে জেলেদের।
কুয়াকাটা পৌর এলাকার হোসেন পাড়া গ্রামের জেলে মোঃ মিলন মাঝি,নূর ছায়েদ মাঝি,নূর জামাল,সিদ্দিক,মিজানুর,মন্নান মোল্লা ১৯ খুটা জেলে নৌকার মাঝি ও মাল্লারা অভিযোগ করেন, এখন ভরা ইলিশ মৌসুম চলছে কিন্ত তারা এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি। ৫নং জেলে ইউনিট কমিটির সভাপতি আব্দুর রব হাওলাদার,সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর সহ ইউনিট কমিটর নেতা স্বপন,আব্দুর রহমান (কালাম),মতি রহমান ও হালিম মাঝি চাঁদাবাজি,স্বজন প্রীতি ও সেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাদেরকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছে। ভূক্তভোগি জেলেরা বলেন, আশার আলো জেলে সমিতি কর্তৃক নির্ধারণকৃত প্রতিটি খুটা জেলের জন্য ১৪০ হাত জায়গা ফাঁকা রেখে সমুদ্রে মাছধরার কথা থাকলেও সেখানে ৫নং ইউনিট কমিটির ৫নেতা ১হাজার থেকে দেড় হাজার হাত জলসীমানা আটকিয়ে মাছ শিকার করছে। নির্ধারণকৃত ১৪০ হাতের স্থলে জলসীমানার অতিরিক্ত জায়গা দখল করার কারণে তারা ১৯ নৌকার শতাধিক জেলে মৌসুমের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি। এসব জেলেরা জাল খুটা ও নৌকা নিয়ে একেকজনে প্রায় ২-৩ লাখ টাকার মৎস্য সরঞ্জাম নিয়ে বেকার বসে আসে। আড়ৎদারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়ে জাল নৌকা গড়ে তুললেও সমুদ্রে মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে এসব জেলে পরিবার গুলো। দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ওই সংগঠনটির সভাপতি সহ অন্যান্য নেতারা মাছ শিকার করে আসছে। ভূক্তভোগি এসব জেলেরা জেলে ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত সহ সমুদ্রে অবাধ ও নিরাপদে মাছ শিকারের নিশ্চয়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জেলেদের এমন অভিযোগের বিষয়ে আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ নিজাম শেখ বলেন,সমুদ্রে খুটা জেলেদের জন্য সীমানা নির্ধারণ পুর্বক ১৪০ হাত পর পর খুটা বসিয়ে জাল পাতার জন্য ইউনিট কমিটিকে বলে দেয়া হয়েছে। সীমানা নির্ধারণের সময় তৈল খরচ বাবদ প্রকার ভেদে ৩’শ থেকে ৭’শ টাকা ইউনিট কমিটি নিয়ে থাকে। জেলেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ টাকা নেয়া হয়েছে। যার পুরোটাই জেলেদের উন্নয়নে খরচ করা হয়। তিনি আরও বলেন, ১৯ জেলে এখনও সমুদ্রে জাল ফেলতে পারেনি তা তার জানা ছিল না। মাছধরা থেকে বঞ্চিত এসব জেলেদের সীমানা নির্ধারণ করে দু’য়েক দিনের মধ্যেই বিক্ষোভ রত জেলেদের সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
এবিষয়ে পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা জানান, সমুদ্রে নির্ধারিত জলসীমানার অতিরিক্ত জায়গা দখল করার বিষয়ে কয়েকজন জেলে তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। ওই ইউনিট কমিটি সহ স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রহিম হাওলাদারকে দ্রæত সমাধান করার জন্য বলে দিয়েছেন।