17 C
Bangladesh
Saturday, December 21, 2024
spot_imgspot_img
Homeপর্যটনকুয়াকাটাকুয়াকাটায় পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।

কুয়াকাটায় পূন্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব।

 নিজস্ব প্রতিবেদক:

পূন্যস্নানে মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাপ রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। তবে ব্যতিক্রম ভাবে দেখা গিয়েছে, পুণ্যস্নান শেষে হিন্দু ধর্মালম্বী নারী ঝরনা রায় সমুদ্র সৈকতের পারে দেশের মঙ্গলের জন্য টানা ২ ঘন্টা গীতা পাঠ করেন। 

তিন দিন ব্যাপী এ রাস মেলা উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় লক্ষাধিক পূন্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাস উদযাপন কমিটি।

 শনিবার ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় সমুদ্রের নোনা জলে গাঁ ভাসিয়ে এ গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন সনাতনীরা। স্নানের আগে মোমবাতি, আগরবাতি, বেলপাতা, ফুল, দুর্বা, হরতকি, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন হিন্দু ধর্মালম্বী নারীরা। এ সময় উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। পরে শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ১৭ জোড়া যুগল প্রীতিমা দর্শন করেন ভক্তরা। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুয়াকাটায় রাস উৎসব শেষ হয়। এর আগে রাতভর কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতনীরা।

জানা যায়, মানবতা রক্ষায় দ্বাপর যুগে কংস রাজাকে বস করে পূর্ণিমা তিথিতে ঘটে রাধা-কৃষ্ণের পরম প্রেম। সেই থেকেই মূলত রাস উৎসবের প্রচলন হয়। তবে সত্য ও সুন্দরের জয়ের আকাঙ্ক্ষায় প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব উদযাপন করে আসছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।

১৫( নভেম্বর) শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকা কেন্দ্র করে প্রচুর পর্যটকরে আগমন ঘটেছে এই সৈকতে,এতে এই উৎসবের আনন্দের আলাদা একটা মাত্রা যোগ করেছে।  

এবারের রাস উৎসবে দেশের  বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় হাজারো  ভাসমান দোকানিরা রং-বে- রংঙের বাহারি মেলার সামগ্রীর পসরা বসিয়ে ছিল। দেশের খ্যাত নামা শিল্পীদের পরিবেশনায় মুগ্ধ করেছে আগত ভক্তদের।

খুলনা থেকে আসা পূন্যার্থী সজল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,পরিবারের সব সদস্যদের  সঙ্গে নিয়ে স্নানে এসেছি। জাগতিক অনেক পাপ হয়ে থাকে আমাদের তাই পবিত্র হওয়ার জন্য গঙ্গায় আসছি।তবে এবছর এখানে আসলেও বিগত বছরগুলোতে আমরা দুবলার চরে রাস উদযাপন করেছি।

 বরিশাল থেকে আসা পূন্যার্থী সম্রাট কর্মকার বলেন, রাতভর এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেছি। এ অনুষ্ঠান থেকে ভোররাতে পূন্যস্নান করবো। তাই প্রতি বছরের ন্যায় বছরও কুয়াকাটায় আসা। আসা করছি পূন্যস্নানের মাধ্যমে সকল জাগতিক পাপ দূর হয়ে যাবে।

ঝরনা রায় জানান, দেশের মঙ্গলের জন্য ২ ঘন্টা যাবত গীতা পাঠ করছি।দেশের মানুষ ভালো থাকুক,দেশ  সুন্দরভাবে পরিচালনা করা হোক সব হিংসা বিভেদ কেটে গিয়ে শান্ত শিষ্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক প্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করেছি। 

 রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে এবারের আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে  ব্যাপক ভীড় ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস মেলায় আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি,পুলিশ,র‌্যাব,গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছিল পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোষ্ট এর মাধ্যমে পূন্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবেই শেষ করতে সক্ষম হল এবারের আয়োজনটি।

কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন  জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাত ৫ টা ৪৩ মিনিটে  পূর্ণিমার লগ্ন শুরু হওয়ার পর পরই বেশির ভাগ পূণ্যার্থীরা স্নান সেরে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে। আবার অনেকে পূর্ণিমার লগ্ন শেষ হওয়া পর্যন্ত স্নান শেরে শনিবার  ভোরে কুয়াকাটা ত্যাগ করবেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রাস উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছি, বরাবরের থেকে একটু আলাদা বিনোদন দিতেই আমরা তিনদিনের কনসার্ট, মার্কেটের প্রসার বাড়ানো, আলাদাভাবে মোবাইল টয়লেট, চেইঞ্জিং রুমসহ নানা আয়োজন যে কারনে এবারের আয়োজন প্রত্যেকটা পূর্ন্যার্থী ও দর্শনার্থী নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আয়োজন উদযাপন করেছে। আমরা পুরোপুরি এই আয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি এবং এই রাস মেলা উপলক্ষে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি ।

Most Popular

Recent Comments