নিজস্ব প্রতিবেদক:
কলাপাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার অবৈধ গুরুর হাটে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। অন্যান্য সময়ে এই চাঁদাবাজি চললেও আসন্ন কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজরা হয়ে পড়েছে বেপোরোয়া। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজার। প্রতি সপ্তাহের সোমবার বাজার বসে এখানে। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে এই এই হাটটি সরকারিভাবে ইজারা দেয়া হয়নি। তারপরও সেখানে চলে চাঁদাবাজির মহোৎসব। স্থানীয় কিছু নব্য আওয়ামী লীগারদের ছত্রছায়ায় এই চাঁদাবাজি চললেও প্রশাসন নীরব। বরং চাঁদা উত্তোলনে নানাভাবে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক একাধিক ভূক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি গরু বিক্রি করলেই দুই থেকে তিন হাজার টাকা, আর ছাগল প্রতি ৫০০-৬০০টাকা চাঁদা দিতে হয় একটি চক্রকে। চাঁদা না দিলে মারধরসহ গরু আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে এই চাঁদাবাজি চলে। মাঠ পর্যায়ে টাকা উত্তোলন করেন ছাত্রলীগ নামধারী জসিম, নিজাম, জাফর ও শাওন। এর আগে ২০জুলাই সোমবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়। কিন্ত ২৭জুলাই হাটবারের দিন সকাল থেকেই টেবিল-চেয়ার পেতে গুরুর হাটে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে জুয়েল। এসময় কলাপাড়া থানার পুলিশ সদস্যদের নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে উপস্থিত হন, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল এবং তার সহযোগিরা। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার অমিতাভ সরকার বলেন, অবৈধ গরুর হাটে
চাঁদাবাজি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। স্থানীয় প্রশাসনের গাফেলতি থাকলে তা ক্ষতিয়ে দেখার কথাও জানান তিনি। এদিকে বিষয়টি নিয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ চাইলে হাট বসবে। তবে সরকারিভাবে ইজারা না দেয়া পর্যন্ত যাতে আর কেউ চাঁদা তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে প্রশাসন। ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে এমন চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না জানিয়ে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান সিকদার বলেন, কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের বিরুদ্ধে এর আগেই বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে গরুর হাটে চাঁদাবাজির সাথে কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান হাসান সিকদার। বিষয়টি নিয়ে কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”নীলগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ নিজামীর আমার নাম ব্যবহার করে গরুর হাটে চাঁদাবাজি করছেন”। তাহকে কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের নেতা হয়ে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজারে নিয়মিত যাতায়াতের কারন জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, “আমার পুরনো বাড়ি পাখিমারা বাজারের কাছে। একারনেই ওই বাজারে আমার যাতায়াত”। জুয়েলের বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে একাধিক অভিযোগে বিষয়ে প্রশ্ন করলে জুয়েল বলেন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান সিকদারের সাথে তার দূরত্ব রয়েছে। একারনেই তিনি এমনটি বলেছেন বলেও মনে করেন তিনি। তবে, ছাত্রলীগ নাম দিয়ে এমন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, এমন প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।