28.5 C
Bangladesh
Friday, November 15, 2024
spot_imgspot_img
Homeদোয়া মুনাজাতঘরে ঘরে সংবাদপত্র পৌঁছে দেওয়া সেই সেকান্দর চাচার ঘরের চুলায় জ্বলে না...

ঘরে ঘরে সংবাদপত্র পৌঁছে দেওয়া সেই সেকান্দর চাচার ঘরের চুলায় জ্বলে না আগুন।


মোঃ ফেরদৌস মোল্লা, পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ
তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়? দুঃখের দহনে, করুন রোদনে, তিলে তিলে তার ক্ষয়……………।” ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের লেখা ও প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আব্দুল জব্বার এর কণ্ঠে গাওয়া এ গানের মতই জীবন সংসার চলচ্ছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পত্রিকা বিলিকারী হকার সিকান্দার মুন্সির জীবন।

তার বিলিকৃত পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিন কত যে খবর আসে কাগজের পাতা ভরে কিন্তু তার দুঃখ-দুর্দশার জীবন পাতার অনেক খবরই রয়ে যায় অগোচরে। মঠবাড়িয়া উপজেলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পত্রিকায় চোখ বুলান। দেশ বিদেশের খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পত্রিকা বহনকারী হকার সেকান্দার মুন্সির ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে না। চলে দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে দিনের পর দিন মানবতার জীবনযাপন। ঘরে মানুসিক ভারসাম্যহীন এক প্রতিবন্ধী ছেলে, স্বামী পরিত্যাক্তা এক মেয়ে, স্ত্রী ও নাতি নাতনীদের নিয়ে অনেক সময় অনাহারে রাত্রি কাটিয়ে দেন। এক কাপ চা এবং সাথে একটু রুটি খেয়ে সকাল থেকে রাত পার করে দেন। মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো টাকা থাকলে হয়তো খাবারের রুটিন টা পাল্টে যেত পারতো। যোগ হতে পারতো মাছে-ভাতে বাঙালি’ চির চেনা মুখ। সেকেন্দার চাচা নিজেই জানেনা পরিবারকে নিয়ে শেষ কবে মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছে। দারিদ্রতার ছাপ পরেছে চেহারায়। তার জরাজীর্ণ শরীর যেন বলে দিচ্ছে হে সেকান্দার তুমি আর কত পত্রিকা দিয়ে পাঠক, গণমাধ্যমকর্মী,দেশ ও জাতির সাহায্য করবে?কিন্তু পাঠকদের বিন্দুমাত্র বুঝতে দেন না। তবুও থেমে নেই তার পত্রিকা দেওয়া। সঠিক সময়ে অফিস আদালত সহ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন পত্রিকা। মোয়াজ্জিনের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দৈনিক ভোরের ডাক ,যুগান্তর, দৈনিক সংবাদ,প্রথম আলো,আজকের বার্তা সহ অসংখ্য জাতীয় ও আঞ্চলিক পেপার গুলোর অপেক্ষায় থাকেন কখন ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়া এসে পৌঁছাবে। পরিবারের আহারের সন্ধানে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কয়েকটি পত্রিকা হাতে বেরিয়ে পরেন। ২০ বছর ধরে পাঁয়ে হেঁটে হেঁটে সমগ্র মঠবাড়িয়ায় পত্রিকা বিলি করে যাচ্ছেন বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া ৭০ বয়স উর্ধ্ব হকার সেকেন্দার চাচা। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে বিক্রি করেন। যা পান তা দিয়ে সংসার চালানোর সংগ্রাম করে যান। কিন্তু দিন শেষে জীবন সংগ্রামের এ খেলায় তাকে পরাজিত হতে হয়। পেরে উঠেন না। মানুসিক ভারসাম্যহীন ছেলে মহিউদ্দিন (৩২) এর চিকিৎসার জন্য মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন। একমাত্র মেয়ে লিলি পারভীন দীর্ঘদিন ধরে স্বামী পরিত্যক্তা। স্ত্রী-সন্তান নাতি নাতনীদের নিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে খবরের কাগজ বিলি করে জীবন পাতার খবর মেলাতে পারছেন না এ ভূমিহীন গৃহহীন হকার সেকেন্দার চাচা। প্রতিদিন অনেক খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, যা-ই থাকুক না কেন, সব সামলে সে খবর ঠিকই পাঠকের দ্বারে পৌঁছে দেন।কিন্তু তার জীবনের পাতার করুণ খবর রয়ে যায় সবার অগোচরে। ছেলের সুচিকিৎসা আর পেটের ক্ষুধা নিবারণের মৌলিক চাহিদাটুকু চান সমাজের বিত্তশালী সচেতন নাগরিকদের কাছে। হকার সেকান্দারের মেয়ে লিলি পারভীনের বলেন আমার বাবার এখন অনেক বয়স হয়েছে, হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করতে তার অনেক কস্ট হয়। যদি বাবাকে একটি পত্রিকা বিক্রির দোকান করে দেওয়া হয় তাহলে মরার আগে কিছুটা হলেও কস্ট লাগব হবে।

Most Popular

Recent Comments