17 C
Bangladesh
Saturday, December 21, 2024
spot_imgspot_img
Homeউদ্বোধনচট্টগ্রামে ফুলের রাজ্য উদ্বোধন

চট্টগ্রামে ফুলের রাজ্য উদ্বোধন

বশির আহাম্মদ রুবেল, চট্রগ্রাম

চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে মাস ব্যাপী ফুল উৎসব, বাংলাদেশের মিরাকেল গার্ডেন নগরীর ফৌজদারহাট লিংরুটে ডিসি পার্ক।চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর তত্ত্বাবধান ও আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে,মাদকের স্বর্গরাজ্য থেকে ১৯৪ একর যায়গা গড়ে উঠেছে ফুলের স্বর্গরাজ্যে।দেশী- বিদেশী ১২৭ প্রজাতির কয়েক লক্ষ ফুলের সমারোহে ইতোমধ্যে সেজেছে ডিসি পার্ক,ফুলের সৌরভ ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমে উঠেছে ফুল উৎসব।

ফুলের মতো আপনি ফুটাও গান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম এর আয়োজনে ২৫ জানুয়ারি হতে ডিসি পার্কে আয়োজন করা হচ্ছে এ ফুল উৎসব। মাসব্যাপী এই ফুল উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।

ফুল উৎসবের উদ্ধোধন করেছেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো মাহবুব হোসেন ১৯৪ একর জমি মাদকের আকড়া থেকে ফুলের আঁকড়াতে রুপান্তর করণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রশংসা করেন। এছাড়াও অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ফ্লাওয়ার ফেস্টিবলের জমকালো আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ দেন।

তিনি বলেন যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে পর্যটনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ফুল উৎসবের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা চেতনাকে সামনে নিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে। সামনের প্রজন্ম এর জন্য আমাদেরকেই পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য জেলা প্রশাসক গণকেও এই ধরনের আয়োজন করার জন্য উদাত্ত আহ্ববান জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন অবৈধ দখল, মাদক অভয়ারণ্য কে ফুলের বাগিচা বানানো হয়েছে। পর্যটনকে কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি এই উদ্যোগ যেন ক্ষনিকের উদ্যোগ না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে সেই আহবানে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার জন্য বলেন। এছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের জন্য হাউজিং ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো তোফায়েল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ভূয়সী প্রশংসা করে উল্লেখ করেন পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ও জঙ্গিবাদ কে সমূলে নির্মূল করতে এই ধরনের কালচারাল আয়োজন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও ভূমি দস্যু দের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন সরকারি জায়গা কেউ দখলে রাখতে পারবে না। জায়গা ক্রমান্বয়ে উদ্ধার করে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।

উক্ত অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসি পার্ক, নৌকা জাদুঘর, পর্যটন বাস ও ফুল ডে ট্যুর, স্কুল বাস, বার্ড পার্ক এই ৬ টি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ করার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করে এই সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি সকল এমপি মহোদয় ও সচিব মহোদয়গণকে ধন্যবাদ জানান যারা এসে উক্ত অনুষ্ঠান সাফল্যমন্ডিত ও বৃক্ষরোপণ করেছেন।

প্রসংগত এটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় ফুল উৎসব। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়া সহ নানা প্রজাতির দেশী- বিদেশী ১২৭ প্রজাতির কয়েক লক্ষ ফুলের সমারোহে ইতোমধ্যে সেজেছে ডিসি পার্ক। দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস হতে আগত বাল্ব হতে জেলা প্রশাসনের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাচ হাজার টিউলিপ।
এসকল ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রজাতির ফুলের পাশ্বেই লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত।
মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরো আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেল্ফি জোন।
এ উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটকদের জন্য থাকবে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে থাকবে বিভিন্ন সময়ের ১৫ টি নৌকা প্রদর্শনী। চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০ টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য থাকবে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থা থাকবে। বিনোদন প্রেমীদের জন্য থাকবে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্ণার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিং এর ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল সহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যাবস্থা থাকবে। শিশু- কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, সীসঅ, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইন সহ থাকবে নানা আয়োজন। পুরো ফুল উৎসবকে ঝাকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হবে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির অংশগ্রহণে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন, ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
প্রসংগত গত বছরের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ১৯৪.১৩ একর খাস জায়গা অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জায়গায় মাত্র একমাসের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি হতে ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১০ দিন ব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসব এর আয়োজন করা হয়।দশদিন ব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমন করেন ডিসি পার্ক। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনকে অনুপ্রেরণা যোগায়। এমন অনুপ্রেরণা থেকেই প্রতিবছর এ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

Most Popular

Recent Comments