মোঃ-আলমগীর হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আওতাধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃক বাস্তাবায়নধীনে মাধ্যমে প্রতিটি জেলা, উপজেলার প্রত্যকটি পৌরসভা ও ইউনিয়নের সরকারী কিশোর-কিশোরী ক্লাব খুলে দিল সরকার। চালু হবে আগামি ০১ লা ফেব্রুয়ারি ২০২১। দেশের সব ক্লাব পূণরায় চালু করবে সরকার। এগিয়ে যাচ্ছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব।সরকারি প্রকল্পের আওতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সকল জেলায় ২ জন করে ক্লাবের জেলা ফিল্ড সুপারভাইজারদের পরিদর্শন ও তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এই পর্যন্ত সরকার ৪,৮৮৩ টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব সরকারিভাবে চালু করেছে। অন্যন্য জেলার মত চুয়াডাঙ্গা জেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব ৪৫ টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। চার উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১ টি করে সরকারি কিশোর- কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার-ই ধারাবাহিকতায় আজ ২৭ জানুয়ারী বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমানের সভাপতিত্বে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, তিনটা সংগিত ও দুইটা আবৃতি পদের বিপরীতে মোট ২৫ জন ক্যান্ডিডেট পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে এই নিয়োগ পরিক্ষায় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও সাদিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা মহিলা বিষয়ক অফিসার সম্মানিত ডিডি মাকসুরা জান্নাত, মৎস্য অফিসার হামিদ শাহিন এবং জেলা সুপারভাইজার এম কাবিল উদ্দিন। প্রতিটি ইউনিয়ন অথবা উপজেলার কাছাকাছি হাই স্কুল থেকে ১০ জন কিশোর ও ২০ জন কিশোরী নিয়ে ক্লাব সরকারিভাবে পরিচালিত হয়। দেশের সকল জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ (ইউএনও) ইউনিয়নের সংখ্যার উপর নির্ভর করে সরকারিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেন। সরকারি ক্লাব গুলার উপদেষ্টা হিসাবে আছেন স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্যগণ। উপজেলা ক্লাবের সভাপতি হিসাবে আছেন প্রতি উপজেলার ইউএনও মহদয় এবং ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির কায্যকরী সদস্য আছেন প্রতিটি জেলার ফিল্ড সুপারভাইজারগণ। সরকারি নিয়ম নীতিমালা মেনে পরীক্ষা ও ভাইবার মাধ্যমে ১ জন করে জেন্ডার-প্রোমোটার এবং প্রত্যেকটি ক্লাবের জন্য একজন করে সংগীত শিক্ষক ও একজন করে আবৃতি শিক্ষক চূড়ান্ত নিয়োগ পান। জেন্ডার-প্রোমোটারগণ কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার ও সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠন সম্পর্কে ক্লাবে ক্লাস নেন। কিশোর অপরাধ থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে এবং দেশকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করতেন। এছাড়াও ক্লাব ভিত্তিক বাল্যবিয়ের বিরদ্ধে সমাজের মানুষের মাঝে জনসচেতন সৃস্টি করছে কিশোর কিশোরী ক্লাব। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে, সরকারের ২০৪১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আছে এই কিশোর কিশোরী ক্লাব। শুধু তাই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সে আলোচনা করা হয় দেশের প্রতিটি ক্লাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব অগ্রাধিকার প্রকল্প এই কিশোর কিশোরী ক্লাব। সরাসরি মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের দায়িত্ব নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের মানসিক আনন্দের জন্য সংগীত শিক্ষক আর কবিতা শিক্ষার আবৃতি শিক্ষক কবিতা আবৃত্তি ক্লাস নিবেন এবং কিশোর-কিশোরীদের সংগীত শিখাবেন। করোনা-ভাইরাসে জন্য কিশোর-কিশোরীদের কথা চিন্তা করে তারা যেন করোনায় আক্রান্ত না হয় সেজন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ক্লাব বন্ধ করে দেয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এক চিঠির মাধ্যমে ক্লাবের সকল কায্যক্রম আপাততঃ বন্ধ করে দিয়েছিল। এই করোনাকে ভর করে সমাজে বেড়েছিল বাল্যবিবাহ, মাদকাসক্ত, ইভটিজিং ও কিশোর অপরাধসহ নানা খারাপ কাজ। কিশোরী বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, এবং কিশোর অপরাধ, কিশোরী ইভটিজিং, মাদক, যৌতুক থেকে কিভাবে কিশোর-কিশোরীদের বিরত রাখা যায় সেই বিষয়ে আমরা সব সময় কাজ করছি।বাংলাদেশের সকল জেলার সকল ক্লাব খুলে দেওয়াতে কিশোর -কিশোরীরা আস্তে আস্তে অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। ক্লাবের বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল ফিল্ডে বাল্যবিয়ে ঠেকানো। কত দিন লাগবে ক্লাব খুলতে তার কোন খবর নাই এই ভাবনায় দিন কাটতো শিক্ষকদের। বাড়িতে থাকতে থাকতে সবাই ঝিমিয়ে যাচ্ছিল, লেখাপড়া মন বসছিল না। মাঝখানে কিশোর কিশোরী ক্লাব খুলে দিতে বাধ্য হল সরকার। প্রতিটি জেলার ফিল্ড সুপারভাইজারগণ কিশোর -কিশোরীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কিশোর-কিশোরীদের তদারকি করছে সরাসরি।
এই বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক(অঃদাঃ) জনাব, মাকসুরা জান্নাত স্যারের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদেরকে জানান, আমরা সরকারী নির্দেশনা পেয়েছি এবং আমার জেলার সকল ক্লাবের কার্যক্রম চালু করে দিয়েছি। আজ ৫ টি পদের নিয়গ প্রক্রিয়া শেষ হ্ল। চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় মোট ৪৫ টি সরকারি কিশোর-কিশোরী ক্লাব আছে। ইতিমধ্যে আমরা করোনার ভিতর ১৬ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে অপরাধীদের জেল ও জরিমানা করা হয়েছে।
আমাদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে নিরলাসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা কিশোর – কিশোরী ক্লাবের জেলা ফিল্ড সুপারভাইজার এম. কাবিল উদ্দিন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কিশোর -কিশোরী ক্লাবের ফিল্ড সুপারভাইজার আরও বলেন, তৃণমুল পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে কিশোর -কিশোরী ক্লাব বদ্ধপরিকর। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সরকার ন্যাশনাল হেল্প লাইন নং ১০৯ এর ব্যবস্থা করেছেন। কল করতে কোন টাকা লাগে না। বাল্যবিবাহ যেখানেই ঘটুক না কেন নিকটস্থ উপজেলা প্রশাসন অথবা ১০৯ নাম্বারে অথবা জেলা সুপারভাইজারদের জানাতে পারবেন। দেশ, জাতি এবং বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজ গঠনে কিশোর-কিশোরী ক্লাব সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে জনবল ও ক্লাবগুলিকে সরকারিকরণ করবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের প্রত্যক জেলা ফিল্ড সুপারভাইজারগণ।