29.1 C
Bangladesh
Sunday, April 27, 2025
spot_imgspot_img
Homeরাবিজনবল সংকটে রাবি মেডিকেল সেন্টার, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

জনবল সংকটে রাবি মেডিকেল সেন্টার, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিবেদক
জনবল সংকটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারে। প্রায় ছয় দশক পেরোলেও জনবল ঘাটতির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না মেডিকেল সেন্টারটি। সংশ্লিষ্টদের দাবি রাবি প্রশাসনের অবহেলা এর অন্যতম কারণ। যার ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ছে নানা অসুবিধায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৫ বছর পরেই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৫৮ সালে মেডিকেল সেন্টারটি চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জুলাই বিপ্লবের পর অন্যান্য অনেকগুলো জায়গায় এডহক নিয়োগ দেয়া হলেও মেডিকেল সেন্টারটিতে এমন কোন উদ্যোগ নেয়নি রাবি প্রশাসন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হলেও জনবল সংকটে যেসব সেবা বন্ধ সেগুলোতে নজর দিচ্ছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে রাবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু, এই স্বল্প পদের বিপরীতেও চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৪ জন। অবসরে যাওয়া ২ চিকিৎসককে চুক্তিভিত্তিক এবং একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। মোট ৩৬টি পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১ পদই পড়ে রয়েছে ফাঁকা।

এদিকে সেন্টারে ২ জন পুরুষসহ মোট ৬ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তা ২ জনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ৬ জনের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন। নাক-কান-গলা, মনোরোগ, অর্থোপেডিক ও গাইনোকোলোজিস্ট কোনো চিকিৎসক নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিকেল সেন্টারটিতে নেই কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট, পেশেন্ট বেড ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন চ্যানেল। একটি ইসিজি মেশিন আছে, তবে সেটা পরিচালনা করার জন্য একজনও স্পেসালিস্ট নেই। সম্প্রতি ইমারজেন্সী সেকশন থেকে একজন স্টাফকে এনে ইসিজি মেশিনটি সচল রাখা হলেও বন্ধ রয়েছে সেবা। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটা পরিচালনার জন্য পূর্ণকালীন টেকনোলোজিস্ট নেই।

এছাড়াও মেডিকেল সেন্টারটিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকলেও কোন প্যাথলজি ডাক্তার নেই। শিক্ষার্থীরা যখন সেবা নিতে আসছেন প্যাথলজি ডাক্তার না থাকায় শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ রাখছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর সেবাদানের জন্য এম্বুল্যান্সের সংখ্যা মোট ৪ টি। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে বিপুল সংখ্যক এই শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪ টি এম্বুল্যান্স পর্যাপ্ত নয় বলে জানায় মেডিকেল সেন্টার সংশ্লিষ্টরা।

ওষুধ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অভিযোগ রয়েছে সেবা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের দাবি সাধারণ কিছু ওষুধ সবাইকেই দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময়ই যথাযথ ওষুধ পাননা তারা। এদিকে প্রতিবছর একেকজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি বাবদ গুনতে হয় ১০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের দেয়া মোট এই অর্থের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আছিয়া আকতার স্মরণী বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আসার পর শুনতাম আমাদের একটি প্যারাসিটামল সেন্টার আছে। তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি কেন এই নামে ডাকা হতো। নামে মেডিকেল সেন্টার হলেও শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারেনা এই সেন্টার। চিকিৎসা ফি নামে আমাদের যেই টাকা নেওয়া হয় আমার মনে হয়না সেটির যথাযথ কোনো প্রয়োগ এই সেন্টারটিতে হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, আমি জানিনা কেন এটিকে মেডিকেল সেন্টার বলা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থতা তো দূরে থাক, এখানে সাধারণ রোগের চিকিৎসাও পাওয়া যায় না, রোগীকে ছুটতে হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। প্রশাসন এবং মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ কি নিয়ে কাজ করছে সেটি তারাই ভালো জানেন। আমার চাওয়া মেডিকেল সেন্টার নাম দিয়ে এই প্রহসন দ্রুত বন্ধ হোক, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শূন্য ১৮ টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। এদিকে বিগত সরকারের পতন হলে কর্তব্যরত আরও ৪ জন ডাক্তার পদত্যাগ করেন। এতে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে। সবশেষ একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে শূন্য পদসংখ্যা ২১ টি।

কথা হয় রাবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার মাফরুহা সিদ্দিকা লিপির সাথে। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের মেডিকেল সেন্টারে জনবল সংকট অনেক বড় একটি বাঁধা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গেলে বারবার তারা শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এই প্রশাসন আসার পর আমি বারবার তাদের কাছে গিয়েছি, আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। তারা যে খুব বেশি কিছু করছেন সেটা বলার সুযোগ নেই। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। অবসরে যাওয়া আমার দুই সহকর্মী চুক্তিতে আবারও জয়েন করেছেন। তবে এটি যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। এখনও আমাদের একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। আমি প্রশাসনকে বলবো তারা যেন দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।

এদিকে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব জানান, আমরা মেডিকেল সেন্টার নিয়ে কাজ করছি। সবশেষ একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও কয়েকজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি জানান, আমরা দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। এছাড়াও প্যাথলজি চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারেও একই কথা বলেন তিনি।

হাফিজুর রহমান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Most Popular

Recent Comments