22.2 C
Bangladesh
Tuesday, November 19, 2024
spot_imgspot_img
Homeতারাবিহতারাবির নামাজের গুরুত্ব, ফযিলত এবং কিছু বিধিবিধান।

তারাবির নামাজের গুরুত্ব, ফযিলত এবং কিছু বিধিবিধান।

ফারদিন মোহাম্মদঃ

তারাবি শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে : প্রশান্তি লাভ করা, আরাম করা, বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যা ওয়াজিবের কাছাকাছি।

তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূল (সা:)বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে। (তিরমিজি)

কুরআনে কারীম তেলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে।

রাসুল (সা:) তারাবিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসুল (সা:) এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন।
উপস্থিত লোকজনও তার সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তারা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের নিকট আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী)

তারাবি বিশ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল (সা:), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত। সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল। রাসুল (সা:) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা:) এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রা:) বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ)

এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী (রা:) সহ সকল সাহাবীদের ঐক্যমতে বিশ তারাবি পড়া হয়েছে। বিশ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)

তারাবির নামাজে ৪ রাকাত পরপর তাসবিহ তাহলিল এবং দোয়া দুরুদ পড়বেন। তার পাশাপাশি নিম্ন লিখিত দোয়াটি পড়তে পারেন-

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

এটা কোন হাদিসে বর্ণিত নাই। কোন এক বুযুর্গ এই দোয়াটি পড়তেন বলে জানা যায়।

মহিলাদের জন্য তারাবিসহ অন্যান্য সব নামাজ ঘরে একাকি পড়াই শরিয়তের বিধান। এর বিপরীত করা জায়েয নয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মহিলাদেরকে মসিজেদ না এসে ঘরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিলেন তখন একজন মহিলা সাহাবি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মন চায় আপনার পিছনে নামাজ পড়তে, আমাকে অনুমতি দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তদুত্তরে যা বললেন তার মর্ম হলো, আমি তোমার আগ্রহের মূল্যায়ন করি, তা সত্ত্বেও মসজিদে নববিতে এসে পঞ্চাশ হাজার রাকাত সওয়াব পাওয়া এবং আমার পিছনে নামাজ পড়া থেকে তোমার ঘরে একা নামাজ পড়াই উত্তম।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তারাবির নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)

Most Popular

Recent Comments