নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
তুচ্ছ কারণে একটি মাদ্রাসার সহ-সুপারকে এক বছরের ও অধিক সময় থেকে বরখাস্ত করে রেখে চাকুরী থেকে বাদ দেয়ার মত জঘন্যতম চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে একটি মাদ্রাসার সভাপতি ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের সুপারিনটেন্ডেন্টের বিরুদ্ধে।আর এতে অধ্যায়নরত ছেলেমেয়ে আর পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বরখাস্ত হওয়া ও চাকরি হারানোর শংকায় ভীত নিরীহ সেই হুজুর।
ঘটনাটি ঘটেছে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়ীয়া ইউনিয়নের “জামেয়া-ই ফাতিমিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়”
উক্ত মাদ্রাসার ভুক্তভোগী বরখাস্তকৃত সুপার জনাব মোঃ জাকারিয়া হামিদ অশ্রুসজল চোখে জানান,”আমি সুনাম ও দক্ষতার সাথে উক্ত মাদ্রাসায় চাকুরী করে আসছিলাম।এরই মাঝে এই মাদ্রাসায় ২০১৪ ইং সালে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগের সময় আমি এবং বর্তমান সুপার একসঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং উক্ত পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করি,কিন্তু শিক্ষা অফিসার জহিরুল আলমের যোগসাজশে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবারও নিয়োগ বোর্ড গঠন করে বর্তমান সুপার মহসীন আলীকে নিয়োগ দেয়।
সেই থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বর্তমান সুপার মহসিন আলী আমাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করে তার সূত্র ধরে ২০২০ ইং সালের একুশে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে (নোটিশবিহীন)অসুস্থতার কারণে একটু লেট করে মাদ্রাসায় যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের পর ও ২০ আগস্ট,২০২০ ইং হতে বর্তমান পর্যন্ত আমাকে বিধিবহির্ভূতভাবে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক বরখাস্ত করে রেখেছে।
আমার দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে ইউনিভার্সিটি ও কলেজ লেভেলে পড়াশোনা করছে,আমি গরিব মানুষ,সংসারের অন্যকোন উপার্জনের মাধ্যম আমার নেই। এই করোনাকালীন দুঃসময়ে বরখাস্ত করায় বেতন ও নেই।বাঁচা-মরা অবস্থা নিয়ে মাদ্রাসার সভাপতি ও ভান্ডারিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধাকে হাতে পায়ে ধরলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে,তিন লক্ষ টাকা হলে তোমার বরখাস্ত তুলে নেওয়া হবে।
কিন্তু টাকা দেবার মত মানসিকতা ও সামর্থ্য আমার নেই হেতু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভান্ডারিয়া উপজেলা সহকারী জজ আদালতে মামলা দিলেও বারবার তারিখ দিচ্ছে।চাকরি বাঁচার জন্য চারিদিকে মরীচিকার পিছনে দৌড়াদৌড়ি করছি কিন্তু কে শোনে কার কথা”!…..বলে বেচারা সহ-সুপার কেঁদে ফেলেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মহসীন আলীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,”এটাতো আমার একার বিষয় না, সভাপতি আছেন।আর তাছাড়া তিনি মামলা করেছেন,কী হয় সেখানে হোক”।
মাদ্রাসার সভাপতি ও ভান্ডারিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধাকে এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান,”উনি (সহ-সুপার)আদালতে মামলা করেছেন,আদালত কী রায় দেয় দেখেন”।
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অর্থ সম্পাদক জনাব,এম.এম.ইলিয়াস বলেন,”উনাকে (জাকারিয়া হামিদ) যেসব কারনে বরখাস্ত করা হয়েছে তা একটি ঠুনকো অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। উনার অপরাধ ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয়ে একটু দেরি করে এসেছিলেন।
মুলত সুপার নিয়োগের সময় নিয়োগ বোর্ডে জাকারিয়া হামিদ বর্তমান সুপারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এছাড়া সভাপতি ও সুপারের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে উনি সোচ্চার ছিলেন। তাই উনার আজ এ পরিণতি।আমি বাংলাদেশের সব শিক্ষক সংগঠনকে অনুরোধ করছি জাকারিয়া হামিদের পাশে আপনারা দ্বাড়ান”।
ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ‘সীমা রানী ধর’-কে এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”এ বিষয়ে আমি জানতাম না।আপনার মাধ্যমে শুনলাম।ভুক্তভোগী শিক্ষক যেন আমার সাথে দেখা করে।বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব”।
এ বিষয়ে পিরোজপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উক্ত মাদ্রাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষককে সহ-সুপারের কোন দোষ আছে কীনা জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন,”জাকারিয়া হামিদ সাহেব ভালো মানুষ,খুব ভালো।কিন্তু আমরা তার পক্ষে কথা বললে সভাপতি আমাদের ও বরখাস্ত বা নানাভাবে হয়রানি করবে তাই চুপ থাকাই ভালো”।
বরখাস্তকৃত সহ-সুপার জাকারিয়া হামিদ ছল ছল চোখে বলেন, আমি বাংলাদেশের সব শিক্ষক সংগঠনকে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন আমার পাশে দাঁড়ায়”।