মুজাহিদ হোসেন ,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
শিয়াল মানুষের কথা শুনলে বা মানুষকে দেখলে দৌড়ে পালাবে এটাই স্বাভাবিক,কিন্তু কখনো কি শুনেছেন বা দেখেছেন যে মানুষকে দেখলে শিয়াল কাছে আসে?
নওগাঁ জেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দেখেছেন অনেকে। কিন্তু সেখানকার খেঁক-শেয়াল কি দেখেছেন?
দিনে যেমন যাদুঘর, বিহারের সৌন্দর্য, পাখির ডাক, ফুলের বাগান, বিশাল আকাশ আপনাকে বিমোহিত করে। তেমনি সন্ধ্যা নেমে আসলে শেয়ালের ডাক স্তব্ধ নিরবতা ভেঙ্গে বিহারের নৈসর্গিক প্রকৃতি উপভোগ্য করে তোলে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে কি- না আসতেই গর্ত থেকে ঝাঁক ধরে বেড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে খেঁক-শেয়ালের দল। আবার ধীরে-ধীরে তারা জড়ো হয় ডাক বাংলোর সামনে। তাদের অপেক্ষা কখন আসবে কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু। কারন প্রতিদিনই সন্ধার পর শেয়ালের জন্য খাবার নিয়ে হাজির হোন তিনি।
পাহাড়পুর বিহার জুড়ে শ’খানেক খেঁক-শেয়ালের বসবাস। মাটির ডিবেতে গর্ত করে বসবাস করে শেয়ালগুলো।
বছর দুয়েক আগে চাকুরীর সুবাদে পাহাড়পুর বিহার ও যাদুঘরে যোগদান করেন আরজু। যোগদান করেই তার নজরে আসে খেক-শেয়ালগুলো। পদক্ষেপ নিতে একদম দেরি করেননি প্রান-প্রকৃতি প্রেমী আরজু। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীর বংশ বিস্তারে এগিয়ে আসেন।
খাবার দিয়ে শুরু হয় কাছে ভিরানোর চেষ্টা। সাথে ডাকাডাকি। এভাবে ধীরে-ধীরে খেক-শেয়ালের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন। তাই এখন সন্ধ্যা নামতেই ডাক বাংলোর সামনে অপেক্ষায় থাকে শেয়ালগুলো। ডাক দিলেই ছুটে আসে। ঘিরে ধরে। কাছে বসে খাবার খাওয়ান আরজু।
ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘সোমপুর বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও যাদুঘর দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন। অনেকে দলবেঁধে পিকনিকে আসেন। আগতরা পিকনিক কর্নারে রান্না করেন, খাবার গ্রহন করেন। মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ খেয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে বিহারের খেঁক-শেয়াল। কিন্তু বংশ বৃদ্ধি হয়না খুব একটা। তাদের বংশ বৃদ্ধির বড় বাধা ‘কুকুর’। শেয়াল শাবক দেখতে পেলে কুকুর’রা কামড় দিয়ে মেরে ফেলে। তাই প্রজননকালে আলাদা নজর রেখে, খাবার দিয়ে খেক-শেয়ালের বংশ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন আরজু ও তার সহকর্মীরা।
আরজু বলেন, ‘ক্ষুধা পেলেই বাসার দরজায় এসে শব্দ করে, ডাকাকাকি করে ওরা। লকডাউনে দীর্ঘদিন বিহার ও যাদুঘরে বন্ধ ছিলো দর্শনার্থীর আগমন। ফলে চরম খাবার সংকটে পড়েছিলো শেয়ালগুলো। কিন্তু অভূক্ত থাকতে হয়নি কাউকে। খুধার্ত শেয়ালগুলোর জন্য আলাদা করে চাল কিনে রান্না করা ভাত, খিচুরী পাউরুটি খেতে দেওয়া হয়েছিলো। এখনও খেতে দিতে হয়। শেয়ালগুলোকে খাবার দিয়ে আমি আনন্দ পাই। ভালো লাগে।’
এই কাজে সহযোগিতা করেন বিহারের সাইট পরিচালক সারোয়ার হোসেন ও আরো কয়েকজন। তারাও খাবার দেন। তাদের ডাকেও সারা দেয় শেয়ালগুলো। অল্পদিনেই খেক-শেয়ালগুলো পোষ মেনেছে বলেন তারা।
পাহাড়পুরে দিনের সৌন্দর্য আর রাতে শেয়ালের মিতালী দেখতে এখন অনেকেই আসছেন।
আগতরা বলছেন, খেঁক-শেয়াল প্রায় বিলুপ্ত প্রাণী। বংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ ও মানুষের সাথে বন্ধুত্বের এই ঘটনা অনেকটা অসাধ্য সাধন। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রানীর প্রতি সকলকে সদয় হওয়ার আহবান দর্শনার্থীদের।
পাহাড়পুরের পাশে মালঞ্চা জামে মসজিদের পেশ ইমাম আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ বলেন,প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি করা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।আরজু সাহেবের মতো আমাদের সবারই প্রতিটি প্রাণীকে মমতার দৃষ্টিতে দেখা উচিত।রাসুল সাঃ ও প্রানীকূলের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছেন।