মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
কোন কোন সন্তানের কাছে “বাবা মানে হাজার বিকেল আমার ছেলেবেলা…বাবা মানে রোজ সকালে পুতুল পুতুল খেলা”।
বাবা তার সন্তানের উপর বিরাট বটবৃক্ষের ছাঁয়ার মতো।আদরের ছোট ছেলেমেয়ে খেতে চায়না বলে বাবা মা কাঁদে আবার সেই বাবা মা ই যখন বৃদ্ধ হয় তখন ঐ সন্তানই বাবা মাকে খাবার দেয়না বলে তারা আবার ও কাঁদে।
অবাক হবার মতো ঘটনা যে,এক মুঠো খাবারের আশায় সন্তানের বিরুদ্ধে থানা-আদালত পর্যন্ত যেতে হয় বাবা-মাকে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার পাঁড়ইল ইউপির দিঘীপাড়া গ্রামে।
শুধু দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ময়েজ উদ্দীন (৮০) নামে এক অসহায় বাবা। তিনি নিয়ামতপুর উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের দিঘীপাড়া (পশ্চিম পাহাড়) গ্রামের বাসিন্দা। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি (বাবা)বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
গতকাল ৪ অক্টোবর,সোমবার বিকেলে নিয়ামতপুর থানায় বৃদ্ধ তার ছেলে মুনছের আলী (৩৫) ও পুত্রবধূ সুলতানা বেগমের (৩০) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নিয়ামতপুর থানার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বৃদ্ধ ময়েজ উদ্দীনের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। তার ছেলে কৃষি কাজ করে সংসার চালান। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজেই রান্না করে খেতেন। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। একমাত্র ছেলে ভরণপোষণ দেন না। শুধু বাঁচার তাগিদে নিজেকেই নিজের খাবার রান্না করে খেতে হয়। অনেক সময় রান্না করে খেতে না পেরে অভুক্ত থাকতে হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের মাঝে তাইজুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, ছেলে মুনছের আলী তার বাবার প্রতি খুবই উদাসীন। কোনো খোঁজখবর রাখেন না। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেশীরা মুনছেরকে বোঝানোর পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। অবশেষে নিরূপায় হয়ে ভরণপোষণের দাবিতে ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধ।
ভুক্তভোগী বাবা ময়েজ উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে একাই রান্না করে খান। বয়সের ভারে এখন তেমন কিছুই করতে পারিনা। বৃদ্ধ হয়েছি বলে অসুখ-বিসুখ প্রায় লেগেই থাকে। আমার যোগ্য কর্মক্ষম ছেলে থাকার পর ভরণপোষণও বন্ধ করে দিয়েছে। পুত্রবধূর প্রতি কিছুটা ভরসা করলেও সেও ছেলের মতোই আচরণ করে।
অসহায় বৃদ্ধ ময়েজ উদ্দিন তিনি বলেন, যেদিন শরীর খুব খারাপ থাকে রান্না হয় না তার। সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। পাড়া-প্রতিবেশীর খোঁজ নিয়ে কিছু দিলে খায়। সব মিলিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটছে এখন। শুনেছি সরকার নাকি বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে আইন করেছে। সেই ভরসায় শুধু দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
অসহায় বৃদ্ধের ছেলে মুনছের আলী বলেন, বাবার বয়স হয়েছে। সব সময় হয়ত তার চাহিদা পূরণ করতে পারি না। বাবা যে অভিযোগ করেছেন তার সব ঠিক নয়।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর বৃদ্ধার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,এটা খুবই দুঃখজনক ব্যপার।বাবা মা বৃদ্ধ হলে তার দায়দায়িত্ব উপযুক্ত সন্তানকেই নিতে হবে।
বৃদ্ধ বাবা ফয়েজ উদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।