মুজাহিদ হোসেন ,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের হাটশাউলি গ্রামে দশ দিন ধরে একঘরে অবস্থায় ছিলো একটি পরিবার। সাংবাদিক ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে একঘরে অবস্থা থেকে মুক্তি পেলো ওই গ্রামের আব্দুর রউফ এবং তার পরিবার।
সোমবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নির্মইল ইউনিয়নের হাটশাউলি গ্রামের আব্দুর রউফ এর কন্যা লতা পারভীন (২০) কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকায় অবস্থান করে আসছিলো। ঢাকা থেকে বেশ কিছুদিন আগে সে তার গ্রামের বাসায় চলে আসে।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার পরিবার জানতে পারে তাদের মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা এবং এর অল্প ক’দিনের মধ্যে সে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াছিন আলী এবং গ্রামের কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গ গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ওই পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
সেই সালিশে সিদ্ধান্ত হয় সদ্যজাত শিশুটির পিতৃপরিচয় না দিতে পারলে তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। উপায়ন্তর না দেখে এবং লোক লজ্জার ভয়ে প্রসব করবার আট দিনের মধ্যেই লতা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। গ্রামের প্রভাবশালী এবং স্থানীয় ওই মেম্বার এখানেই ক্ষান্ত হননি ।
নতুন উদ্দ্যোমে ওই নিরীহ পরিবারের উপরে নিজেদের মনগড়া আইনে নতুন নতুন চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। গত দশ দিন যাবৎ পরিবারটিকে সমাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিছিন্ন করে রাখা হয়, যাতে কোথাও যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য কেড়ে নেয়া হয় তাদের মোবাইল ফোনটিও।
নিজের একমাত্র সম্বল বসতবাড়িটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বেঁধে দেওয়া হয় চারদিনের সময়সীমা। গতকাল সোমবার (২৩ আগস্ট) ছিলো সেই সময়সীমার শেষ দিন। প্রতিবেদক ওই ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই নিয়ে নেয়া হয় জরিমানার ৩০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটির অভিভাবক লতার বাবা আব্দুর রউফ-এর সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জন্মের পর থেকে আমরা এই গ্রামে বসবাস করে আসছি। এই ভিটামাটি ছেড়ে আমি কোথায় যাবো! তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম আমি অসুস্থ গরীব মানুষ কাজ কর্ম ঠিকমতো করতে পারিনা, জরিমানার টাকাটা মাফ দেওয়া হোক। কিন্তু তারা টাকাটা নিয়েই ছাড়লো।
এ বিষয়ে নির্মইল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য ইয়াছিন আলী’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
তৎক্ষনাত বিষয়টি পত্নীতলা থানার ওসি শামসুল আলম শাহকে জানানো হলে তিনি বিষয়টিকে আমলে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে র্ফোস পাঠান। অবস্থা বেগতিক দেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে প্রশাসনের চাপের মুখে নিজের ভুল স্বীকার করে পরিবারটিকে আগের মতোই বসবাস করতে বলেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারটির প্রতি গ্রামবাসীকে সহনশীল হবার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন সরকার-এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। ভুক্তভোগী পরিবারটির সাথে যা হয়েছে সেটি অন্যায়। কাউকে তার নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ কারার এখতিয়ার কারোর নেই, এ জন্য প্রচলিত আইন রয়েছে।