মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
নওগাঁর বদলগাছীতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি
ঘটেছে উপজেলা মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে। ঘটনার বিবাদিদের অভিযোগ সূত্রে
জানা যায়, মথুরাপুর গ্রামের মৃত ইউনুস আলী চৌধুরীর ছেলে শাফিউল কারিম একই
গ্রামের তার আপন চাচাতো ভাই মৃত ইয়াসিন আলী চৌধুরীর ছেলে সালাহ উদ্দীন (শান্ত)
চৌধুরী ও মৃত আলী হাসান চৌধুরীর ছেলে আলমগীর আলম চৌধুরীর নিকট থেকে ৪ শতক
জমি বিক্রয় করার কথা বলে আড়াই বছর আগে ১৯৮০০০/= (একলক্ষ আটানব্বই হাজার) টাকা
গ্রহণ করে। টাকা গ্রহণের পর থেকে সে জমি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ
করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়নের মেম্বার-চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তির মধ্যস্থতার
চেষ্টা করা হলে শাফিউল কারিম বিভিন্ন টালবাহানা দিয়ে এলাকার বাহিরে অবস্থান করতে
থাকে। এক পর্যায়ে গত কুরবানি ঈদের মধ্যে বাড়িতে এসে আত্মগোপন করে থাকে। তার
বাড়িতে আসার বিষয়টি তার চাচাতো ভাই জানতে পেরে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা
করলে ঈদের পরের দিন শাফিউল কারিম তার এক নিকটাত্মীয় ও মামলার ১নং সাক্ষী মুনি সোনারের
বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় মথুরাপুর খাঁপাড়া রাস্তার বাঁশঝাড় সংলগ্ন স্থানে
পৌঁছিলে তার চাচাতো ভাই সালাহ উদ্দীন (শান্ত) ও আলমগীর হোসেন (আলম) তাকে জমি
রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বললে সে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেনা কথা টাকা নেওয়ার কথা
অস্বীকার করে। চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বললে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
মামলার আসামী সালাহ উদ্দীন (শান্ত) চৌধুরী ও আলমগীর আলম চৌধুরী বলেন, আড়াই বছর
আগে শাফিউল কারিম আমাদেরকে ৪শতক জমি দিতে চেয়ে ১৯৮০০০ (এক লক্ষ আটানব্বই
হাজার) টাকা নেয়। টাকা নেওয়ার পর থেকে সে জমি রেজিস্ট্রি না দিয়ে বিভিন্নভাবে
টালবাহানা ও সময় ক্ষেপণ করতে থাকে এবং পালিয়ে বেড়ায়। গত ঈদুল আযহার পরের দিন তাকে
রাস্তায় দেখতে পেয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলতেই সে টাকা নেওয়া এবং জমি বিক্রির
বিষয়টি অস্বীকার করে। তখন আমি চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী চৌধুরী কে ফোন দিলে তিনি
ঘটনাস্থলে এসে উভয়কে ইউনিয়ন পরিষদে বসে সমাধানের কথা বললে কারিম এবং আমরা রাজি
হয়ে স্ব স্ব বাড়িতে চলে যাই। পরবর্তীতে জানতে পারি শাফিউল কারিম ইউনিয়ন পরিষদে না
বসে নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে গত ০৯/০৮/২০২১ ইং তারিখে
সালাহ উদ্দীন (শান্ত), আলমগীর আলম সহ ৬ জনকে আসামী করে ৩১৭০০০ হাজার টাকা ছিনতাই
ও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা করেছে। মামলা নং-সিআর-১৬৩/২১ (বদল)। যে লোক প্রতিবেশী
আত্মীয়ের বাড়িতে লুঙ্গি পড়ে ঈদের দাওয়াত খেতে যায় তার কাছে এতো টাকা থাকে কিভাবে
বোধগম্য নয়। আমার নিকট থেকে গ্রহণকৃত টাকা ফেরত দিবে না বা জমি রেজিস্ট্রি দিবে
না জন্যই আমার ও আমার লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা,
ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমাদেরকে ফাঁসাতেই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে মামলার ১নং সাক্ষী মুনি সোনার বলেন, শাফিউল কারিম তাদের
কাছ থেকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলে শান্ত ও আলমগীর চেয়ারম্যানকে খবর দেয়। খবর পেয়ে
চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী চৌধুরী ও স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে
পুনরায় বসে বিষয়টি মিমাংসার জন্য প্রস্তাব দেন। ঘটনার সময় টাকা ছিনতাই বা
চাঁদাবাজির কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে তাকে কিল ঘুষি মারা হয়েছে। মামলা ৩নং সাক্ষী
একই গ্রামের মৃত আকামদ্দিনের ছেলে মোঃ পনু বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম।
ঘটনাস্থলে মামলার বাদি শাফিউল কারিম উপস্থিত হলে আসামী সালাহ্ উদ্দীন (শান্ত) ও আলমগীর
আলমসহ দুজন অপরিচিতি লোক কারিমকে বলেন, কবে জমি রেজিট্রি করে দিবি বল না হয়তো
চেয়ারম্যানের কাছে চল বলে ধস্তাধস্তি করতে থাকে। কারিম যেতে রাজি না হলে তাকে কিলঘুষি
মেরেছে। কিন্তু টাকা ছিনতাই বা অন্য কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনাস্থলের পাশর্^বর্তী
একাধিক ব্যক্তি বলেন, কারিম এবং শান্ত তারা চাচাতো-জ্যেঠাতো ভাই। শাফিউল কারিম ৪শতক
জমি বিক্রির কথা বলে সালাহ উদ্দীন (শান্ত) ও আলমগীর আলমের নিকট থেকে আড়াই বছর আগে১৯৮০০০(এক লক্ষ আটানব্বই হাজার) টাকা বায়না নেন। বায়নার টাকা এবং রেজিস্ট্রির বিষয়
নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। কারিম এলাকার অনেক লোককে চাকুরী দিতে
চেয়ে বহু টাকা আত্মসাত করে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। বাড়িতে না থাকায় তা সমাধান হয়নি।
ঈদের মধ্যে কারিম বাড়িতে আসলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডাসহ কিলঘুষির ঘটনা ঘটেছে।
টাকা ছিনতাই বা চাঁদাবাজির মতো কোনও ঘটনা আমরা জানি না। তবে কিছুক্ষণপর
চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধানের
কথা বলে চলে যায়।
এবিষয়ে মামলার বাদী শাফিউল কারিমের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি
তাদের নিকট থেকে অনেক জমি পাবো। সেগুলো থেকে আমাকে বঞ্চিত করে রেখেছে। জমি
দিতে চেয়ে শান্ত ও আলমগীরের নিকট থেকে টাকা বায়না নিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি
বলেন, টাকা বায়না নিয়েছি এরকম কোনও প্রমান নেই। আপনার নিকট থেকে বিবাদীরা
কোনও টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে কিনা অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার
অভিযোগে উল্লেখ আছে এবং আপনারা সরেজমিনে তদন্ত করলেই জানতে পারবেন বলে ফোন
কেটে দেন।
এবিষয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী চৌধুরী (টিপু) বলেন, শাফিউল কারিম তার চাচাতো ভাই
সালাহ উদ্দীন (শান্ত) ও আলমগীর (আলম) কে ২শতক করে মোট ৪ শতক জমি বিক্রয়ের কথা বলে তাদের
নিকট থেকে ১৯৮০০০/= টাকা বায়না নেন। যা আমার কাছে কারিম স্বীকার করেছে। ঘটনার
দিন আমি উভয় পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে বসে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলাম কিন্তু কারিম
না বসে কোর্টে মামলা করেছে। আমার জানা মতে সালাহ উদ্দীন (শান্ত) সহ ৬জনকে আসামী
করে যে মামলা করেছে তা মিথ্যা।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, মামলা রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত
চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।