মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সারা দেশে ২৬ হাজার ২শত ২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নিকট গত ২১ জুলাই সকাল ১০ টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২ শতক করে খাস জমির কবুলিয়ত দলিল ও গৃহ হস্তান্তরের শুভ উদ্বোধন করেন এবং পঞ্চগড় সহ দেশের ৫২ টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করেন।
এর ধারাবাহিকতায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন গৃহ হস্তান্তর না করে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৩০টি পরিবারের হাতে কবুলিয়ত দলিল প্রদান করেন। এবং তাদের নিকট আগামী ডিসেম্বর মাসে গৃহগুলো হস্তান্তর করবেন বলে তাদেরকে জানান নির্বাহী অফিসার।
জানা যায়, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে বদলগাছী উপজেলায় ৩০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২শতক করে জমির উপর ২ রুম বিশিষ্ট ঘর দেওয়া হবে। সেই উপলক্ষে উপজেলার সদর ইউনিয়নের আবাদপুর গ্রামে সরকারি খাস জমিতে ৩০ টি পরিবারের নিকট কবুলিয়ত দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে।
একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে জানা যায়, ওই দিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জমির দলিল হস্তান্তর করা হলেও কোনো ঘর হস্তান্তর করা হয়নি। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সরেজমিনে আবাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আদৌ কোনো ঘর নির্মাণ করা হয়নি বা কোনও ঘর নেই। সবেমাত্র ঘরের ভীত কাটার কাজ চলছে। উপস্থিত মিস্ত্রী সেলিম সহ অন্যরা বলেন, গত ১৬/০৭/২০২২ ইং তারিখে ১৭টি গৃহের ভীত কাটা হয়েছে এবং ১৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ থেকে ২১/০৭/২০২২ ইং তারিখ পর্যন্ত এখানে ২২ হাজার ইট গৃহ নির্মাণের স্থলে ফেলা হয়েছে, গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করবে তারা। ইটের মধ্যে ২ নং ইট রয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তারা তা স্বীকার করেন। তারা আরও বলেন, আমরা মিস্ত্রী মানুষ ইট কয় নম্বর এনে দিচ্ছে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটা দেখবে ইউএনও ও পিআইও।
জমির কবুলিয়ত দলিল প্রাপ্ত ভাতশাইল গ্রামের মোঃ রশিদ হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন এবং তার স্ত্রী জেসমিন বেগম সহ অন্যান্যরা বলেন, গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা। নির্মাণ কাজ শেষ হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন আগামী ডিসেম্বরে গৃহগুলো তাদের নিকট ঘর হস্তান্তর করবেন।
অপর দিকে গোড়শাহী গ্রামের মুসলিম ধর্ম গ্রহণকারী ও কবুলিয়ত দলিল প্রাপ্ত রহিমা খাতুনের মা ফাতেমা এবং মুসলিম উদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবারে ইউএনও আমাদেরকে শুধু জমির দলিলের ফটো কপি দিয়েছে ঘর তো বুঝে দেন নি। ঘর দেখেছেন কিনা বা কোথায় আপনাদেরকে ঘর দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমরা ঘরের জায়গা বা ঘর কোনটাই দেখিনি শুধু আবাদপুরের কথা শুনেছি।
চাকরাইল গ্রামের ছাইদুল ইসলামের স্ত্রী জরিনা বেগম ও আয়েশা খাতুন জানান, আমাদেরকে দলিল দেয়া হয়েছে এখনও ঘর দেননি। কবে নাগাদ ঘর দিবে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউএনও বলেছেন ঘর তৈরি হলেই আমাদেরকে দেয়া হবে। তারা বলেন, দলিল যখন পেয়েছি দেরিতে হলেও আমরা ঘর পাবো। তবে ঘর না পেয়েও তারা খুশি।
অপরদিকে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল বলেন, বদলগাছী উপজেলার ৩০ টি গৃহ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত না করে সরকারকে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার তথ্য প্রেরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ২৬ হাজার ২ শত ২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে জমির কবুলিয়ত দলিল ও গৃহ হস্তান্তরের উদ্বোধন করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের এই ভুল তথ্য প্রেরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে।
বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার জানামতে ঘরের নির্মাণ কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বলেন, ঘর নির্মাণ না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে তথ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে এবং সরকারের উন্নয়ন কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন (ইউএনও) বলেন, ৩০ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। ঘর নির্মাণ শেষ হলেই ঘর হস্তান্তর করা হবে।