মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ৭নং আধাইপুর ইউনিয়নের কার্ত্তিকাহার গ্রামের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ডাঃ আব্দুল হান্নান নামী এক ব্যক্তি বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গেজেট অধিশাখা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশিত পজ্ঞাপন সংখ্যার ৯৮ নং ক্রমিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম প্রকাশ করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর তরফ থেকে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশিত গেজেট সুত্রে জানা গেছে ডাঃ আব্দুল হান্নান পিতা মৃত হাবিবুর রহমান, গ্রামঃ কার্ত্তিকাহার ,ডাকঘরঃ বেগুনজোয়ার, উপজেলাঃ বদলগাছী ,জেলাঃ নওগাঁ। গেজেট নং৩৪৬৮। ২০১৭ সালের যাচায় বাছায়ের সুত্র ধরে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এর ৭৩ তম সভার আলোচ্যসুচি ০৩ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেসামরিক গেজেট, বিভাগ রাজশাহী, এর ক্রমিক নং ৯৮ নং এ উপরোল্লিখিত ঠিকানা ডাঃ আব্দুল হান্নান ব্যবহার করেন।
০৩ অক্টোবর সরেজমিন তদন্তকালে কার্ত্তিকাহার গ্রামের মৃত বয়েজ উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মোঃ আবুল কালাম আজাদ, মৃত জিতু সরদারের ছেলে মোঃ আবুল হোসেন এবং একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছার রহমান বলেন ডাঃ আব্দুল হান্নানের বাড়ী বগুড়ার শাজাহানপুর থানার মাঝিড়াতে। ডাঃ আব্দুল হান্নান কার্ত্তিকাহার গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি সহতায় ১৯-০৬-২০০৯ ইং তারিখে কার্ত্তিকাহার মৌজায় তরিকানুযায়ী আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে বিশ্ব মানবকে সৎ ও চরিত্রবান করার জন্য ইহ- পরকালে মুক্তির মহান লক্ষ্যে নিবেদিত একটি সুফি সাধনালয় ‘ দরবার-ই- কলন্দর নামী একটি ঘর নির্মান করেন এলাকাবাসীর সহযোগিতায়। তিনি নিজে গদিনশীল হন। ডাঃ আব্দুল হান্নান মাঝে মধ্যে এসে ঐ ঘরে তার অনুসারীদের নিয়ে আলাপ আলোচনা করতো এবং প্রতি বছর ওরশ করে চলে যেতেন। তার বাড়ী কার্ত্তিকাহার গ্রামে নয়।বাড়ী তার বগুড়ার শাজাহানপুর থানার মাঝিড়াতে বলে জানান। ডাঃ আব্দুল হান্নান মোটা অংকের টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাজার জন্য ২০১৭ সালে যাচাই বাচায়ে অংশগ্রহন করে সুকৌশলে। ০২/০৮/২০১৭ ইং তারিখে এই প্রতিনিধি ৭নং আধাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরীর নিকট থেকে একটি প্রত্যয়ন পত্র গ্রহন করেন। যাতে চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছেন ডাঃ আব্দুল হান্নান পিতা মৃত হাবিবুর রহমান গ্রাম কার্ত্তিকাহার, ডাকঘর নিউ রসুলপুর, উপজেলাঃ বদলগাছী, জেলা নওগাঁ। উল্লেখিত ডাঃ আব্দুল হান্নান কার্ত্তিকাহার গ্রামের অধিবাসী নয়, সে অত্র ৭ নং আধাইপুর ইউনিয়নের নাগরিক নয়। উল্লেখিত ডাঃ আব্দুল হান্নান এই ইউনিয়নের কার্ত্তিকাহার গ্রামের ভোটার নয়। ডাঃ আব্দুল হান্নান কার্ত্তিাহার গ্রামে বসবাস করে না। তার বাড়ী ঘর নাই এবং ইউনিয়ন পরিষদের কোন ট্যাক্স হোল্ডার নয়। অত্র ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম সনদ রেকড বইয়ে তার কোন নাম নাই। চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন ইতিপুর্বে যে প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন, তার বিষয়বস্তু এখনও একই রকম আছে। অর্থাৎ ডাঃ আব্দুল হান্নান এর বাড়ী কার্ত্তিকাহার গ্রামে নয় এবং ৭নং আধাইপুর ইউনিয়নের অধিবাসীও সে নয়। মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে না পারায় ডাঃ আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জবির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ডাঃ আব্দুল হান্নান সম্পর্কে কথা বললে তিনি বলেন পুর্ব থেকে তার নাম দেওয়াছিল, সে হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে তান নাম এসেছে। ডাঃ আব্দুল হান্নানের বাড়ী কার্ত্তিকাহার গ্রামে নয় এবং ৭নং আধাইপুর ইউনিয়নে এমনকি বদলগাছী উজেলায় তার বাড়ী নেই ও অধিবাসীও নয় ,এমন প্রশ্ন তাকে করা হলে সে বিষয়টি এরিয়ে গিয়ে যা ভাল লাগে তাই করেন। অপর দিকে আরেক সাবেক কমান্ডার দেওয়ান এনামুল হক বলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ছামসুল আলম খান ৭নং আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা কালীন সময়ে ডাঃ আব্দুল হান্নান পিতা মৃত হাবিবুর রহমান,গ্রাম কার্ত্তিকাহার, ডাকঘর বেগুনজোয়ার,উপজেলা বদলগাছী জেলা নওগাঁ হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়েছিল। সেই প্রত্যয়ন অনুযায়ী ডাঃ আব্দুল হান্নান ২০১৭ সালে যাচাই বাচায়ে টিকে যায় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখের গেজেট প্রজ্ঞাপনে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ছামসুল আলম খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন ডাঃ আব্দুল হান্নানকে কার্ত্তিকাহার গ্রামের অধিবাসী এবং ৭ নং আধাইপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এই মর্মে আধাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তাকে প্রত্যয়ন দিয়েছেন কি না তা তার মনে নেই বলে জানান। বদলগাছী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি নতুন এসেছেন এবং তার এখানে যোগদানের পুর্বের ঘটনা তাই তিনি তা বলতে পারবেন না।তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও জানান।