মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি//
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন একই ইউনিয়নে কর্মরত ডিজিটাল কেন্দ্রের নারী উদ্যোক্তা জাকিয়া সুলতানা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই নারী। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদ রানা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত ওই নারী জানান, গত সোমবার নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সরকার দলীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান মাসুদ রানা গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্ব থেকে আমাকে বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানি করে আসছেন। তিনি মুঠোফোনে এবং বেশকিছু চিঠির মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ আমাকে বিভিন্ন প্রকার কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন যার যাবতীয় প্রমান আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার কাছ থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং তিনি তার কিছু গোপন তথ্য ডিলিট করে দেন। কয়েকদিন পর লোক মারফত মোবাইল ফোনটি তিনি ফেরত দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, কিছুদিন আগে গণটিকা চলাকালীন সময়ে আমার কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবী করেন। আমি সেই টাকা দিতে না পারায় তিনি আমাকে আমার সকল কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন এবং ডিজিটাল সেন্টারের সকল সেবা সচিব এবং হিসাব সহকারীকে প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন। আমি একজন বিবাহিত নারী এবং আমার জমজ দুটি কন্যা সন্তান আছে। বর্তমানে চেয়ারম্যানের এমন কু-প্রস্তাব এবং হেনস্তার ফলে আমার কর্মক্ষেত্রে যেমন অসুবিধা হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে সাংসারিক কলহের কারণে আমার বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটেছে। এমতাবস্থায় আমার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে কাজ এবং সামাজিক চলাচলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত আমার সম্মানহানি ঘটছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন ওই নারী।
এই বিষয়ে শনিবার বিকালে তার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবা ও মা এর সাথে কথা বললে তারা জানান, এসব কারণে আমার মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। সামাজিক ও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি আমরা। তারা ওই চেয়ারম্যান মাসুদ রানার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
ওই নারী উদ্যোক্তার যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ওই মহিলা ইতিপূর্বে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা কামাই করতো। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার দায়িত্ব সহকারি সচিবকে দেওয়ায় এবং তার নামে দুটি ভিজিডি কার্ড বাতিল করে দেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। তবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার সঙ্গে নাকি তার মনমালিন্য হয়ে কথা বলা বন্ধ আছে।তবে কি নিয়ে মনমালিন্য এ বিষয়ে কোনো সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। আপনার হাতে লেখা কয়েকটি পত্র (চিঠি) তাহলে কি মিথ্যা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ওসব আগের চিঠি। আপনি বিভিন্ন সুবিধা দিতে চেয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন অপর প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে এ বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ করেন তিনি।
এবিষয়ে মথুরাপুর ৮ নং ওয়াডের মেম্বার মোঃগোফফার হোসেন বলেন,চেয়ারম্যানের সাথে ভূলবুঝাবুঝি হয়।আমি নারী উদ্দোক্তার বাড়ীতে যায়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।যেহুতু আমরা সকলে একই পরিষদে বসবাস করবো।আমাদের মাঝে যেন কোন মনোমালিন্য না থাকে।আমি চেয়ারম্যানের পক্ষে তার বাসায় গিয়েছিলাম।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।