17 C
Bangladesh
Saturday, December 21, 2024
spot_imgspot_img
Homeনওগাঁনওগাঁর বদলগাছীতে মাটির হাঁড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুকে নিয়ে বিপাকে নওগাঁর জাইদুল

নওগাঁর বদলগাছীতে মাটির হাঁড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুকে নিয়ে বিপাকে নওগাঁর জাইদুল

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ

নওগাঁর বদলগাছীতে আজ থেকে দশ বছর আগের কথা।বদলগাছী যমুনা নদীতে মাছ ধরতে যান দিনমজুর জাইদুল ইসলাম। মাছ ধরতে ধরতে একটি বেইলি ব্রিজের নিচে পৌঁছলে তিনি একটি মানব শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। কিন্তু আশেপাশে তিনি কিছুই দেখতে পান না শুধু একটি মাটির হাঁড়ি ছাড়া।

এক- পা দু-পা করে তিনি সেই মাটির হাঁড়ির কাছে এগিয়ে যান। হাঁড়ির কাছে পৌঁছা মাত্রই তার হাত-পা বরফে পরিণত হওয়ার মতো অবস্থা হয়। কারণ সেই মাটির হাঁড়িতে ছিল পুরনো কাপড়ে মোড়ানো একটি সদ্যজাত ফুটফুটে ছেলে শিশু।

এ-ই ঘটনা সিনেমার কাহিনীর মতো হলেও ১০ বছর আগে এমন ঘটনাই ঘটেছিল নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা সদরের ছোট যমুনা নদীর পুরাতন বেইলি ব্রিজের নিচে। শিশুটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। অবশেষে আনন্দের সঙ্গেই শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান জাইদুল ইসলাম।

এক কাঠা জমির ওপর একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তার। দিনমজুর কাজ করে শিশুটির জন্য বাজার থেকে কৌটার দুধ কিনে খাওয়াতেন। নিজের সন্তানের মতো করেই শিশুটিকে লালন পালন করতে লাগলেন। ছেলের নাম রাখলেন মুমিন হোসেন। ছেলেকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছিল জাইদুলের। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হলো না সেই সুখ।

যখন মুমিনের বয়স সাত মাস তখন জাইদুলের স্ত্রী অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে যায়। ছেলেকে নিয়ে মহাবিপদে পড়েন তিনি। কিন্তু সবকিছুকেই নিয়তি মনে করে কষ্ট করেই মুমিনকে লালন পালন করতে থাকেন। মুমিনের বাবা ও মা দুই দায়িত্বই পালন করতেন তিনি।

বর্তমান গরীব মৎস্যচাষী জাইদুলের বয়স ৫০ বছর। তার ভাগ্যের পরিহাস বড়ই নির্মম। বছর দুয়েক আগে নানা রোগ এক সঙ্গে বাসা বাঁধে তার শরীরে। ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, লো প্রেসার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। হাত-পায়ে কোনো বল-শক্তি নেই তার। পাড়ার মানুষ খাবার দিলে খেতে পায়, না দিলে না খেয়ে থাকতে হয়। ভিক্ষে করে ওষুধের টাকা জোগান তিনি।

অনাথ শিশু মুমিন স্থানীয় সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিবেশীরাই পড়াশুনার খরচ দেয়।

কাঁদতে কাঁদতে অসহায় জাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শরীরে যত অসুখ আমি হয়তো বেশিদিন বাঁচবো না। জানি না আল্লাহ পাক কার সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। এই ছেলেটার যদি ভালো কিছু একটা দেখে যেতে পারতাম তাহলে মরেও শান্তি লাগতো। দেশের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন এই সন্তানের একটা ব্যবস্থা আপনারা করেন।

Most Popular

Recent Comments