মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে মালি রফিকুল ইসলামের দায়েরকৃত অভিযোগ গ্রহণ করেছেন নওগাঁ জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অভিযোগ তদন্ত করার নোটিশ জারি করেছেন।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্মারক নং-০৫.৪৩.৬৪০০.১০৪.০৫.০০১.২০২২-২০২১(৪), ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে মোঃ আব্দুল করিম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নওগাঁ কর্তৃক স্বাক্ষরিত জারি করা নোটিশ মোতাবেক জানা যায়, জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম, মালি, উপজেলা পরিষদ বদলগাছী, নওগাঁ কর্তৃক জনাব মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিন (১৭৩৯৫), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বদলগাছী, নওগাঁ এর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যূত ও বাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকী প্রদান সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামী ১২/০৯/২০২২ ইং তারিখ বেলা ২.৩০ টায় উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষ বদলগাছীতে তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত তারিখে যথা সময়ে সাক্ষ্য প্রমাণ সহ উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মালি রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উক্ত নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ইউএনও মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বদলগাছী উপজেলা পরিষদের মালি মোঃ রফিকুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী মালী রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন গত বছর যোগদানের পর থেকে কিছুদিন ভালো ছিল। তারপর আমাকে প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও দুর্ব্যবহার শুরু করেন। কখনোই এসবের প্রতিবাদ করিনি। হঠাৎ গত ২৭ জানুয়ারী ২০২২ ইং তারিখ রাত ৮টার দিকে জনৈক আনসার সদস্যের মাধ্যমে আমাকে তাঁর বাংলোতে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং চাকুরীচ্যূত করার হুমকি দেন ইউএনও স্যার। আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন, তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে? তারপর আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করলে তিনি আমার কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করেন এবং বলেন, যদি ২লাখ টাকা দিস তাহলে তোর চাকরি রাখার ব্যবস্থা করবো। তখন আমি বলি আমি গরীব মানুষ, এতো টাকা কোথায় থেকে দিব স্যার বলে টাকা দিতে অপারগতা জানালে আমাকে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপরও আমি কোয়ার্টার থেকে বের না হওয়ায় দীর্ঘ ৭ মাস যাবত আমার বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেয়া হয়। সবশেষ গত ২৮ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে জনৈক আনসার সদস্যের মাধ্যমে তাঁর অফিসে ডেকে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। আমি বের হয়ে না গেলে আনসারের মাধ্যমে বের করে দেওয়া এবং মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন ইউএনও। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ওইদিন (২৮ জুলাই) নওগাঁ জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের ৫জন সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। নিজের কোনও ভিটেমাটিও নেই। এ অবস্থায় কোয়ার্টার থেকে বের করে দিলে আমরা কোথায় যাবো। আমার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়েটি চলতি বছর এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমার মেয়ের এসএসসি পরিক্ষা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। বর্তমানে অন্য জায়গায় আবাসস্থল নেওয়ার মতো আমার আর্থিক কোন সঙ্গতি নেই। আবাসস্থল ত্যাগ করলে তার লেখা-পড়ার চরম ক্ষতি হবে এবং তার জীবনটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় আমি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তাই উপায় না পেয়ে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে গত ৩ আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাননীয় সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ও বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। চাকুরী পুনর্বহাল এবং বেতন ভাতাদি পরিশোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
তদন্ত নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি , এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনি কি নোটিশ দেখেছেন। আপনি একজন সাংবাদিক, নোটিশ জারি করে প্রসেস সার্ভার।