নওগাঁর বদলগাছী উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের প্রকাশ্যে মদ পান; ভিডিও ভাইরাল
মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে কত কিছুই ভাইরাল হয়। কোনওটা নজর কাড়ে আবার কোনও টা নিয়ে হয় সমালোচনা। নওগাঁর বদলগাছীতে সদ্য একটি ঘটনা নিয়ে উঠেছে ঝড়। অন্য কিছু হলেও না হয় হতো কিন্তু সরকারি কর্মকর্তার প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হতেই আলোড়ন সৃষ্টি হয় এলাকায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বদলগাছী উপজেলার এলজিইডি অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রকাশ্যে রাস্তার উপর মোটরসাইকেলে বসে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ও অবৈধ ফেনসিডিল পান করছেন। সেখানে দেখা গিয়েছে পূর্ব থেকে ফোনে যোগাযোগ করা মাদক ব্যবসায়ী জনৈক উজ্জল হোসেন রাস্তার এক পাশ থেকে গোপনে ফেনসিডিলের বোতল সাইফুল ইসলামের নিকট হস্তান্তর করেন। সেই ফেনসিডিল তিনি রাস্তার উপর মোটরসাইকেলে বসে থেকে ঢকঢক করে পান করেন। কিছুক্ষণ পরে ওই মাদক ব্যবসায়ী পুনরায় তার সামনে গেলে তিনি পকেট থেকে টাকা বের করে মাদকের মূল্য পরিশোধ করেন।
জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ী উজ্জল হোসেন উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর (খাঁ পাড়া) গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে। সে দীর্ঘদিন যাবত প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মাদক কারবার পরিচালনা করে আসছে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম অফিস চলাকালীন সময়ে মথুরাপুর খাঁ পাড়া নামক স্থানে রাস্তার উপর প্রকাশ্যে ওই ফেনসিডিল পান করছেন। অপর দিকে একই সময় আরেকজনকে ফেনসিডিল দেওয়ার দৃশ্য ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি হচ্ছে একই উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর সাজিপাড়া গ্রামের আবুল শাহ’র ছেলে রুহুল শাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে সকাল-বিকাল দু বেলায় দেখা যায়। জানা যায় প্রতিদিন সে ২ টি করে ফেনসিডিল পান করেন। যার প্রতিটির বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ২শ টাকা করে। সেই হিসাব মতে প্রতিদিন ফেনসিডিল বাবদ তার ব্যয় হয় ৪হাজার ৪শ টাকা। মাসে লাগে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। সচেতন মহল বলেন, প্রতি মাসে যদি ফেনসিডিল বাবদ তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় তাহলে এতো টাকা তিনি কোথায় পান এবং তার আয়ের উৎস কি? বিষয়টি জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসি বলেন, প্রতিদিনই তারাসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং উপজেলার বাহির থেকেও তরুণ ছেলেরা মোটরসাইকেল যোগে মাদক সেবনের জন্য আসে। আর উজ্জল ছাড়াও অনেকেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে। আগের তুলনায় এখন দিনের বেলায় মাদক বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যায় না। আমরা নিষেধ বা প্রতিবাদ করলে হুমকী-ধামকীসহ থানা পুলিশের ভয়-ভীতি দেখায়। তাই ভয়ে আমরা কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি।
এবিষয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, এটা আমার ভুল হয়েছে। এমন কাজ আর কোনও দিন হবে না। দয়া করে আপনি নিউজ করবেন না। নিউজ করলে আমার চাকুরী থাকবে না। আমার পেটে লাথি মারবেন না প্লিজ। থানার ভিতরে তার সাথে দেখা হলে নিউজ না করার জন্য তিনি বার বার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে এলজিইডি’র প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, এসব আমাকে বলে কি লাভ? সে মদ খায় কি না খায় তাকে জিজ্ঞেস করেন আমাকে কেন এসব বলেন। আর যদি কোনও প্রমাণ থেকে থাকে তাহলে আমাকে দিন আমি বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবো।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহা. আতিয়ার রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। মাদক নিয়ন্ত্রনে আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাই। মাদক উদ্ধারে আমাদের পার্টি থাকে সারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়। ওখানেও আমাদের টীম যাবে। মাদক নিয়ন্ত্রনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।