মুজাহিদ হোসেন নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি//
নওগাঁ ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমৃদ্ধ জেলা। নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বদলগাছী উপজেলার তথা বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির সোমপুর মহাবিহার (পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার) অন্যতম। একই উপজেলায় পাহাড়পুরের সমসাময়িক আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক বৌদ্ধবিহার “হলুদ বিহার” যা বদলগাছী উপজেলা থেকে প্রায় ১১কিমি পূর্ব-দক্ষিণে এবং ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে প্রায় ১৬ কিমি দক্ষিণে বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের প্রাণ কেন্দ্র দ্বীপগঞ্জ নামক স্থানে অবস্থিত। এটি দ্বীপগঞ্জ বৌদ্ধ বিহার নামেও পরিচিত। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বিহারটি সংরক্ষিত করা হলে, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিহারটিতে প্রথমবারের মতো খনন কাজ শুরু করে। এরপর, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বার খনন করে বিহারের অভ্যন্তরে একটি মন্দির আবিষ্কার করেন।এটি খনন করার সময় বেশ কিছু প্রাচীন নিদের্শন সামগ্রী যেমন: মানুষের মূর্তি সম্বলিত ভাঙ্গা, পোড়া মাটির ফলক, পাথর সামগ্রী, মূর্তির স্তম্ভ, মূল অলংকারের ঢালাই ছাচ এবং ভেঙ্গে যাওয়া/চূর্ণ যন্ত্র উদ্ধার করা হয়। বিহারটি বছর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় কর্তৃপক্ষের সঠিকভাবে মনিটরিং ও সংরক্ষণের অভাবে এই প্রাচীন নিদর্শনটির চতুরপাশ ভেঙ্গে প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে যা আজ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। অথচ , বিহারটি পরিদর্শনের জন্য ও শিক্ষা সফরের জন্য প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা পরিদর্শনে আসেন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় বড় বড় উৎসবে যেমন: পহেলা বৈশাখ, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবে দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড় লক্ষ করা যায়। তারা এ সময়গুলোতে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটতে এখানে পরিদর্শনে আসেন। এর ধারাবাহিকতায়, গত ৩রা মে থেকে ৪ঠা মে পর্যন্ত পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে বিহার সম্পর্কে কথা বললে তারা বলেন, এখানে ঘুরতে এসে তারা খুব খুশি ।তবে, অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মতো বিশ্রাম করার জন্য আলাদা নির্দিষ্ট জায়গা নেই যার জন্য দর্শনার্থীর অনেকেই বেশি সময় সেখানে অবস্থান করতে পারছে না। আর এ জন্যই দর্শনার্থীদের অনেকেই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।এলাকাবাসী জানান, বিহারটির চারদিকে দ্রুত সীমানাপ্রাচীর , সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়াসহ বিহারটি অতিদ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হলে বিহারটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং পর্যটন/ বিনোদনের আরও একটি কেন্দ্র হিসেবে বিহারটি আত্মপ্রকাশ পাবে।