মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় পাইলট সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠ বর্তমানে জলাশয়। এখানে আপন মনে চাষ হচ্ছে মাছ ও কচুরিপানার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকে উপজেলার এই প্রধান মাঠটি। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই যেন হাটু পরিমাণ জলাবদ্ধতা। দেখলে মনে হয় এটি মাঠ নয় যেন একটি ডোবা। খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরাসহ ছোট বড় সকল শ্রেণির মানুষ। বছরের পর বছর গেলেও এখন পর্যন্ত এই মাঠে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগে নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খেলাধুলায় উপজেলার সোনালী দিনের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে কেন্দ্রীয় এই মাঠটি। এই মাঠে একসময় অনুষ্ঠিত হত বিভাগীয়সহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ফুটবল টুর্নামেন্ট। এছাড়াও ক্রিকেট, হ্যান্ডবলসহ উপজেলা পর্যায়ের সব ধরনের খেলা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ জাতীয় ও আঞ্চলিক অনুষ্ঠানগুলো অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠেই।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকাকালীন সময়ে এই মাঠে আয়োজন করা হতো বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় খেলার আসর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে খেলাধুলাসহ বাহিরের অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে এই মাঠে কোন অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হয় না। তবে মাঠের অবস্থা ভালো থাকতে স্থানীয় ছেলেরা প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খেলাধুলা করতো। খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের মানুষ শরীর চর্চাও করতো।
কিন্তু দীর্ঘদিন এই মাঠের কোন সংস্কার না করার কারণে এবং পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না করেই মাঠের আশেপাশের জায়গা দখল করে অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণ করার কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও বাসা বাড়ির পানি জমে আজ মাঠটিতে সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার। শুকনো মৌসুমে মাঠ কিছুটা ব্যবহার করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে এই মাঠে স্থানীয়রা মাছ শিকার করেন। এই মাঠটি দিন দিন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। বর্তমান সময়ে কিশোর ও যুবকরা মাঠে এসে খেলতে না পারার কারণে মোবাইল গেমসসহ অন্যান্য অপকর্মের সঙ্গে মনের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ছে। নিয়মিত খেলতে না পারায় হতাশ স্থানীয় খেলোয়াড়রা। কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে এই মাঠে বন্ধ রয়েছে সকল প্রকারের খেলাধুলার চর্চাও।
স্থানীয় বাসিন্দা খোকন, রাজু, হাসানসহ অনেকেই বলেন দুবছর আগেও মাঠে খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এখন আর সেই উপায় নেই। মাঠটি আশেপাশের জায়গার তুলনায় নিচু হওয়াই, পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রাখা ও মাঠ সংস্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানির সঙ্গে আশেপাশের বিভিন্ন ভবনের নোংরা পানি মাঠে প্রবেশ করে। যার ফলে খেলোয়াড়রা অনুশীলন করতে পারেন না। বিশেষ করে পানি নিষ্কাশনের জন্য পাশ দিয়ে যে সরকারি খাল ছিলো তা দখল করে অপরিকল্পিত ভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। যার কারণে মাঠের এই দূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন জয় বলেন বর্তমানে প্রধান এই মাঠটি পানি ও কচুরিপানায় পূর্ন থাকার কারণে নতুন প্রজন্মরা খেলতে না পারার কারণে মোবাইল গেমস, মাদক ও অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। যদি মাঠটি খেলার উপযুক্ত থাকতো তাহলে প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে শিক্ষার্থী ও যুবকরা খেলার চর্চা করতো। এতে করে তাদের শরীর চর্চার পাশিপাশি বিনোদনের মাধ্যমে মানসিক বিকাশও ঘটতো। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে দ্রুত মাঠটি সংস্কার করে খেলাধুলার উপযোগী করার জন্য স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তি বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। আশা রাখি খেলা বান্ধব সরকার দ্রুত এই মাঠটির প্রতি সুদৃষ্টি দেবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন আমি চলতি বছর এই উপজেলায় যোগদানের পরই মাঠটি পরিদর্শন করেছি। খেলাধুলাই পারে যুব সমাজকে মাদকসহ সকল অপকর্ম থেকে দূরে রাখতে। আমি সেই লক্ষ্যে দ্রুত মাঠটিতে মাটি দিয়ে ভরাট করে খেলার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ছোট বেলায় এই মাঠে খেলার আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আজ এই ঐতিহ্যবাহী মাঠটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো এই মাঠটির হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরে আনতে। এছাড়াও আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাঠটির পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করাসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আশা রাখি দ্রুত কাজ শুরু হবে।
স্থানীয়রা দ্রুত এই ঐতিহ্যবাহী মাঠটিতে মাটি কেটে উচু করে এবং আধুনিকায়ন করে স্থানীয় সকল পর্যায়ের মানুষদের খেলার ব্যবস্থা সুগম করে দিতে বর্তমান খেলা বান্ধব সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। যেহেতু উপজেলায় এখনোও মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়নি তাই সরকারি এই মাঠটিকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে পরিণত করার দাবী জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।