এম এম শফিকুল ইসলাম।
স্টাফ রিপোর্টারঃ-
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেনির নুসরাত জাহান নোহা আত্মহত্যা করেছে মানতে নারাজ গ্রামবাসি ও নুসরাতের মা এবং নানি। নুসরাতের নানি তাসলিমার অভিযোগ, সম্পত্তির জন্য সৎ মা ঝুমুর বেগম পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলেছে।
গ্রামবাসির কাছে আত্মহত্যার বিষয়টি রহস্যজনক। তারা অভিযোগ করেন শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আসল রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান।
নুসরাত জাহানের বাবা মো. সুমন মিয়া (৩৫) মামলায় উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে নুসরাত জাহান নোহা (১০) দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীতে পড়াশোনা করে। করোনার মধ্যে স্কুল খুলে এবং সাময়িক পরীক্ষা নেন কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় আমার মেয়ে ফেল করায় গত বুধবার পাঠকক্ষে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সফিকুল ইসলাম (২৭) মেয়েকে গালিগালাজ করে এবং বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। স্কুল ছুটির পরে মেয়ে বাড়িতে এসে অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করেছে।
খাজুরিয়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাখাওয়াৎ হোসেন, শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, আবদুল মালেক মিয়া সহ অনেকে বলেন, শিশু নুসরাত জাহানের আত্মহত্যার বিষয়টি রহস্যজনক। গ্রামবাসি কোন মতেই আত্মহত্যা মানতে নারাজ।
তাদের মতে, এটি আত্মহত্যা নয়। কারণ শিশুটি যেখানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সেখানে ওঠা শিশুর পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। সঠিক তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
স্কুল ছাত্রী নুসরাত জাহানের জন্মদাতা মা তানিয়া আক্তার (৩০) বলেন, আমার মেয়ে নুসরাত জাহান আত্মহত্যা করে নাই। আমার মেয়েকে তার সৎ মা ঝুমুর বেগম ও বাবা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়েছে।
নুসরাতের নানি তাসলিমা বেগম (৫০) অভিযোগ করে বলেন, গত রোববার নুসরাতের দাদা আবদুর রহিম তার বাড়ি এসে বলেন, তিনি (দাদা) তার জায়গা-জমি কিছুদিনের মধ্যে নুসরাতের নামে দলিল করে দিবে। এ কথা তিনি তার ছেলে সুমনকে ও নুসরাতের সৎমা ঝুমুরকে জানিয়ে দিয়েছে।
নুসরাত আত্মহত্যা করেনি, সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করতে সৎমা ঝুমুর বেগম পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলেছে।
নুসরাতের দাদা আবদুল রহিম মিয়া বলেন, নুসরাতের নামে আমার সম্পত্তি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। রোববার সকালে ওই বাড়ি (নুসরাতের নানি বাড়ি) গিয়ে একথা বলে ছিলাম। নুসরাতের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহসব দেখেন, তিনি বিচার করবেন।
নুসরাতের সৎমা ঝুমুর বলেন, নুসরাত আমাদের অজান্তে গলায় ফাঁসদিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নুসরাত একটা ভালো মেয়ে ছিলো।
বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্রি এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই টুকু শিশু আত্মহত্যা করতে পারে বিষয়টি রহস্যনজক।
আগৈলঝাড়া থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আমারা আসামি গ্রেফতারে অভিজান চালাচ্ছি। মামলা তদন্তে ও ডাক্তারি রিপোর্টে সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে। শিশু নুসরাতের মৃত্যুর সাথে যারা জরিত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।