লেখকঃ ফেরদৌস মোল্লাহ্
ছোট বেলা থেকেই খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলো সুমি। সুমি তার পরিবার নিয়ে পদ্মা নদীর ধারে ছোট একটি গ্রামে বসবাস করতো। সুমির শৈশব কাল গ্রামেই কেটে যায়। সুমি তার বাড়ির পাশে একটা স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।পরবর্তীতে তার বাবা তাকে একটা হাইস্কুলে ভর্তি করে দেন। সে সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করে। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আসা করে। হটাৎ বেশ কয়দিন যাবৎ একটি ছেলে তার পিছন পিছন চলতো।ছেলেটা সম্পর্কে তারই চাচাতো ভাই হয়।বহুদিন যাবত কারো সাথে কোন কথা হচ্ছিলো না,সুমি মনে মনে চিন্তা করে হয়তো সবুজ তাকে পছন্দ করে।সবুজ একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে।একদিন স্কুল থেকে বাড়ী যাবার পথে সবুজ ডাকদিয়ে বলে, “সুমি, একটু ধারাও।” সুমি, ” জী বলুন?” সবুজ মৃদুমৃদু কন্ঠে বলে, “সুমি আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তুমি সেটা বুঝোনা।”সুমি বললো, “না কী বলতে চান?”
সবুজ, “সুমি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ILove You.” সুমি একটু মুসকি হাসি দিয়ে চলে গেলো, কারণ সুমিও তাকে পছন্দ করছিলো।এর পর থেকে তাদের রোজ দেখা হতো কথা হতো।এভাবেই একটি বছর কেটে গেলো।সুমি সপ্তম শ্রেণীতে উঠছে।তার বাবা তার বিয়ের জন্য তাদের পাশের গ্রামের একটি ছেলের সাথে বিবাহ ঠিক করলো।সুমি সবুজকে সব কিছু খুলে বললো যে তার বাবা তার জন্য বিয়ে ঠিক করছে তাই তাদের মধ্যে যে ভালোবাসা চলছিলো তা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।তাদের ভালোবাসা অসমাপ্তই রয়ে গেলো।
সুমির পলাশ নামের একটা ছেলের সাথে বিবাহ হয়, সবুজ চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখতে না পারায় পরিবারকে না বলেই কোন এক স্থানে চলে যায়।বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন সুমি সবুজকে খুঁজছে, না দেখতে পেয়ে অজান্তেই চোখ থেকে পানি ঝরছে।
পলাশ সুমিকেও অনেক ভালোবাসে সুখে শান্তিতেই তাদের পরিবার চলতেছে।এক বছরের মাথায় তাদের একটা কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।তিন মাসের পর তার স্বামী দূর্ঘটনায় মারা যায়। সুমির চারোদিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসলো।সুমি তার সন্তানকে দাদা দাদির কাছে রেখে শহরে চলে আসেন। সেখানে একটি চাকরি নেয়। কাজের সুবাদে একটা ছেলের সাথে প্রেমে ঝরিয়ে পরে। পরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক হয়।ছেলেটা একসময় তাকে ঠকায়। সুমি আবারও ভেঙ্গে পড়ে। এর মধ্যে ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে কথা চলছিলো সুমির।সুমির ব্রেকাপের পর নিজেকে শেষ করার জন্য অনেক চিন্তা করে কারণ ছেলেটা তাকে ঠকিয়েছে।কিন্তু ফেসবুকের সেই ছেলেটা ( আকাশ) সুমি তাকে সব কিছু খুলে বলে আকাশ তাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে জীবনটাকে নষ্ট করতে দেয় নায়।পরবর্তীতে সুমি দেশের বাহিরে চলে যায় এর মধ্যে এক বছরে আকাশের সাথে কোন যোগাযোগ নেই।হঠাৎ করে সুমি একদিন ফেসবুকে তাকে আবারও খুজে পেলো এবং তাকে রিকোয়েস্ট দিয়ে মেসেজ করলো, “আমি সুমি।”আকাশ তাকে সিন করে বললো,” এতো বছর পরে মনে পড়লো?”
সুমি,”আমার আগের আইডিটা নষ্ট হয়ে গেছে, পরবর্তীতে এই আইডিটা খুললাম।” যাইহোক অনেক কথা চলতে আছে।সুমি আকাশকে পছন্দ করে অনেক বার বলছেও কিন্তু আকাশ তাকে একজন বন্ধুর মতো মনে করে।সুমি বলছিলো,” তুমি যদি আমাকে বিবাহ করো তাইলে আমি দেশে চলে আসবো।”আকাশ রাজি ছিলোনা। পরবর্তীতে সুমি দেশে ফিরে আসলো এবং সুমি তার পছন্দে একটা ছেলের সাথে বিবাহ করে।কিন্তু সেই ছেলের আরো একটা বিবাহ ছিলো বৌ বাচ্চা ছিলো কিন্তু সুমির তা জানা ছিলো না।জানার পরে সুমি আবারও ভেঙ্গে পড়ে এবং সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নেয়।আবারও আকাশের কাছে বলে। আকাশ অনেক বুঝানোর পরে তাকে শান্ত করে এবং সুন্দর জীবনে ফিরিয়ে আনে।সেই ঘরে সুমির একটা পুত্র সন্তান জন্ম হয়।
এখন সুন্দর ভাবে তাদের জীবন কাটে।
*গল্পটির শিক্ষা হলো: জীবনে এমন একজন বন্ধু থাকা দরকার যা জীবনের সবসময় পাশে থাকবে।