এস মন্ডল, ,ফুলবাড়ী(দিনাজপুর)থেকে;
অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, আটকাতে পারেনি সবুজের প্রতিভাকে। অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কিছু করা সম্ভব তা রিমোট কন্ট্রোল ও জিপিএস নিয়ন্ত্রিত ড্রোন তৈরী করে দেখিয়ে দিলেন মেধাবী ছাত্র খুদে বিজ্ঞানী সবুজ সরদার।
সবুজ সরদার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর মহেশপুর গ্রামের রিকশাভ্যান চালক এনামুল সরদারের ছেলে। অসচ্ছলতার কারনে আট দশজনের মতো তার জীবনে পাইনি অধুনিকতার ছোয়া,গরীব বাবা যা রোজগার করে তাই দিয়ে কোন মতে চলে তাদের সংসার । সবুজ পরিবারে অবস্থা বিবেচনা করে অল্প বয়স থেকেই লেখা পড়ার পাশাপাশি শুরু করেন মোবাইল মেরামতের কাজ। সেই থেকে সে নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে খেলাপড়ার পাশাপাশি চালাচ্ছেন তার গবেষনা।
গত বৎসর তার মোবাইলে মেরামতের দোকানে দেশিয় প্রযু্িক্ত কাজে লাগিয়ে তৈরী করেন চালক বিহীন উড়ো জাহাজ। যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে অত্র জেলাসহ সরাদেশে। এবার জমিতে কীটনাশক ওষুধ স্প্রেসহ শুকনো রাসায়নিক সার ছিটানোর জন্য তৈরি করেছেন ড্রোন। যা সম্পূর্ণ রিমোট কন্ট্রোল ও জিপিএস নিয়ন্ত্রিত।
সবুজ সরদার ২০২১ সালে ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে বর্তমানে দিনাজপুর শহরের উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিদ্যা বিভাগের শিার্থী।
সবুজের স্বপ্ন ছিল উড়োজাহাজ তৈরি করবেন। সেই স্বপ্ন থেকে মাত্র ৪৫ দিনে চালকবিহীন উড়োজাহাজ তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। উড়োজাহাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পর এবার তৈরি করেছেন ড্রোন। যা দিয়ে জমিতে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করাসহ শুকনো রাসায়নিক সার ছিটানো সম্ভব। এই ড্রোন তৈরি করতে তার লেগেছে তিন মাস।
গতকাল বুধবার কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তার ড্রোনটি প্রদর্শনে নিয়ে আসলে সেখানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজের তৈরি ড্রোন জমিতে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করছে, ড্রোনের এমন কর্মকান্ড দেখতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়।
কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,সবুজ লেখাপড়ায় খুব মেধাবি ছাত্র ছিলো। বর্তমানে তার তৈরী উড়ো জাহাজ ও ড্রোন তৈরী দেখে আমরা হতবাক। আমি প্রত্যাশা করছি সরকার যদি তাকে সহযোগীতা করে সে আমাদের দেশের জন্য আরো আধুনিক কিছু যন্ত্রাংশ আবিস্কার করবে।
শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সামেদুল ইসলাম বলেন, সবুজের কাজে ইউনিয়নবাসীসহ ফুলবাড়ীবাসী আজ গর্বিত। সবুজের জন্য ইতিমধ্যেই আমাদের ইউনিয়নের নাম দেশবাসীর কাছে পরিচিত হয়েছে।
সবুজের পিতা একরামুল সরদার বলেন, আগে সবুজের কাজ দেখে বিরক্ত হতেন। যেখানে সংসার চলে না, সেখানে অহেতুক টাকা নষ্ট করে যন্ত্রপাতি তৈরি করার কি দরকার! কিন্তু ছেলেকে থামানো যায়নি। একের পর এক নতুন কিছু তৈরি করেই চলেছে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
সবুজ সরদার বলেন, তিন মাসে তৈরিকৃত ড্রোন এখন আকাশে উড়ছে। জমিতে কীটনাশক স্প্রে ও শুকনো সার ছিটানোর কাজ করছে। ড্রোনটি দুই লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে এবং জমিতে স্প্রে করতে পারে। একবারের চার্জে ড্রোনটি ত্রিশ মিনিট আকাশে উড়ছে। রিমোট কন্ট্রোল ও জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) নিয়ন্ত্রিত ড্রোনটি দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রোনটি ২০ থেকে ২৫ লিটার তরল পদার্থ বহন মতাসম্পন্ন তৈরি করতে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এতে ১০ বিঘা জমিতে স্প্রে করা সম্ভব হবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবন করতে প্রয়োজন অর্থ। সরকার যদি আমাকে আর্থিক সহায়তা করে তাহলে স্বল্প খরচে দেখেই আধুনিকমানের ড্রোনসহ অনেক কিছু উদ্ভাবন করতে পারবো।