আবদুল্লাহ আল মামুন :
ফেনীর এক গৃহবধূ শ্বশুর বাড়িতে পৈশাচিক নির্যাতনে বাকশক্তি হারানোর পর বাবার বাড়ি এসেও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের এসিডে ঝলসে যান।
০৫ আগস্ট, রোববার ফেনীতে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে শহরে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভার একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসে অমির পরিবার। এ সুযোগে বেলা ১২টার দিকে বাবার বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের পূর্ব দরবারপুর সেকান্দরপুর মৌলভী বাড়ীতে নির্যাতিত অমির উপর এসিড ছুঁড়ে তিন যুবক। এদের মধ্যে ২ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অমিকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে।
অমির বোন শারমিন আক্তার জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে মা শাহেন আরা বেগমসহ ফেনীর সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে মানববন্ধনে অংশ নিতে শহরে আসেন। মানববন্ধন শেষে খবর পান তার বাড়িতে অসুস্থ খালেদা আক্তার অমিকে লক্ষ্য করে জানালা দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করা হয়। বাকশক্তিহীন অমি তাদের জানিয়েছেন, ফুলগাজীর নিলক্ষ্মী শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা তারেক, মিনার ও ফরহাদ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারেক সম্পর্কে অমির স্বামী ফ্রান্স প্রবাসী আবদুল হালিম লিখনের ফুফাতো ভাই। মিনার ভাগ্নে। তিনি আরো জানান, এসিডে অমির মুখ ও হাত ঝলসে গেছে।
ঘটনার সময় ঘরে থাকা অমির ছোট বোন মিম জানান, অমির চিৎকার শুনে তিনি অমির রুমে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন রুমে বিছানা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। অমি শরীর ঝলসে মাটিতে কাতরাচ্ছেন। পরে তার শৌর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে অমিকে দ্রুত ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, অমির শরীরের ডান অংশে ও চোখে এসিডে ক্ষত হয়েছে। আশংকা মুক্ত হলেও কসমেটিকস সার্জারি প্রয়োজন অমিকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই মাঠে নামে র্যাব পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। র্যাব অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায় তারেককে ফুলগাজী বাজার এলাকা থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে আটক করে।
অন্যদিকে ফেনীর পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী মিনারকে পুলিশ আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে যারা জড়িত জানা যাবে তাদের কেও গ্রেফতার করা হবে।
প্রসঙ্গত; ২০১৬ সালে ফুলগাজীর খালেদা ইসলাম অমির সাথে পারিবারিকভাবে পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়ির আবুল হাসেমের ছেলে প্রবাসী লিখনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে লিখনের মা ও ভাই-বোনরা মিলে অমিকে যৌতুকের জন্য নানা নির্যাতন করতে থাকে। গত জুন মাসে চিকিৎসার নামে অমি ও তার চার বছরের একমাত্র কন্যা নুরীয়াকে জীবন বিষধর সাপ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। গত ৭ আগস্ট রাতে অমিকে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয়। অমি মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাকে কোন চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরদিন ৮ আগস্ট বিকেলে পাশের এলাকার একজন সাপুড়ে এনে (ওঝা) পুনরায় সাপ দিয়ে অপচিকিৎসার নামে অমিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে।খবর পেয়ে সেদিনই অমির পরিবার তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে অমিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৮দিন চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১৬ আগস্ট অমিকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবার। চিকিৎসকরা অমির পরিবারকে জানান অধিক নির্যাতনে সে বাকশক্তি হারিয়েছে। ফিরতে সময় লাগবে। এদিকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর খবর পেয়ে ১৭ আগস্ট অমির শ্বাশুড়ীসহ তাদের লোকজন অমিকে জোর করে তার বাবার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় অমির পরিবার বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বাড়ি-ঘরে হামলা করে।
এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট অমির মা শাহান আরা বাদী হয়ে ফুলগাজী ৯জনকে মামলা করেন। মামলার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে অমির ননদ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অমির বাবা ইসমাইল হোসেন ও ভাই সাগর কাতার প্রবাসি। তিন বোনের মধ্য দ্বিতীয় অমির চার বছরের কন্যা নুরীয়া মায়ের জন্য দিশেহারা।অন্যদিকে মেয়ের শোকে মা পাগল প্রায়।