মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁঃ
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর ইউপির ধর্মপুর গোয়ালভিটা হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসার সভাপতি,সভাপতির জামাই ও প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অত্র এলাকার বাসিন্দারা অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন ও সভাপতি আব্দুল বারেক মন্টু ও সভাপতির জামাই উজাউল ইসলামের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
২১ আগস্ট, বুধবার এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এ অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে,বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গোয়ালভিটা হোসেনিয়া আলিম মাদ্রাসাটি যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দিদ পীরে কামিল সৈয়দ সালেহ আহমেদ কালিমী ও সৈয়দ আশ্রার আহমেদ কালিমি মুর্শিদ দ্বয়ের পবিত্র হাতে প্রতিষ্ঠিত। মাদ্রাসায় কর্মরত বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও দীর্ঘদিন যাবত জোরপূর্বক সভাপতির আসনে অধিষ্ঠিত থাকা আব্দুল বারেক মন্টু এর যোগসাজসে মাদ্রাসাটির যাবতীয় আয় ব্যয় শুধুমাত্র ভাউচার সর্বস্ব করে তুলে মাদ্রাসাটিকে নিঃস্ব করে রেখেছে। পাঠদানের অনুপযোগী,ছাত্রী কমনরূম ও ছাত্রী শৌচাগারের অবস্থা খুবই বিশ্রী।অধ্যক্ষ, সভাপতি ও সভাপতির জামাই অত্র মাদ্রাসার কৃষি শিক্ষক উজাউল ইসলাম এই আত্মসাৎ এর মূল অধিনায়ক।তারা প্রশাসনিকভাবে মাদ্রাসাটিতে পরিবারতন্ত্র গড়ে তুলেছ।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে সভাপতি হিসেবে আব্দুল বারেক মন্টু আর গভর্নিং বডির অন্যান্য সদস্যরা সভাপতির ছেলে,আপন ভাগিনা,আপন ভাতিজা,আপন ভাতিজার বউ এবং গত আওয়ামীলীগের শাসনামলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচন না করে পকেট কমিটির মাধ্যমে ৮ বার তিনি সভাপতি থাকা অবস্থায় তার জামাই উজাউল ইসলাম প্রতিবারই শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে থাকে এবং নিয়োগ বাণিজ্য করতে থাকে।
পরিবার কেন্দ্রিক এই কমিটিটি যখন তখন ভুয়া ভাউচার অনুমোদন ও রেজুলেশন তৈরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। সরকার কর্তৃক সাম্প্রতিককালে প্রদত্ত ৫ লক্ষ টাকার অনুদান এর ভাউচার সমূহ এবং সরেজমিন তদন্তে এর কোন মিল পাওয়া যাবে না। তাদের দুর্নীতির অংশীদার হবে না মর্মে গত ১৮-৮-২০২৪ ইং তারিখে দুইজন অভিভাবক সদস্য একজন কো অপ্ট সদস্য ও চারজন শিক্ষক প্রতিনিধি গভর্নিং বডির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ গত কয়েকদিন যাবৎ অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় আসতেছে না, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি যে দুর্নীতিবাজ সভাপতি দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ছাড়া এক বছরের অর্জিত ছুটি দিয়েছে।
উক্ত আবেদনে তাদের দুর্নীতির কিঞ্চিত ফিরিস্তি হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়েছে যে,মাদ্রাসায় কর্মরত কৃষি শিক্ষক মোঃ উজাউল ইসলাম সভাপতির জামাই, সে ভুয়া রেজুলেশন ও ভুয়া ভাউচার তৈরির কারিগর, এবং সে সভাপতির হয়ে চাকরি দিয়ে চাকরি দাতার কাছে টাকা না পেয়ে জমি লিখে নেওয়ার প্রমাণ ও আছে।
পরিবারতন্ত্র হিসেবে নিয়োগ দেন তানজিনা খাতুন নামে একজনকে সে সভাপতির বড় ছেলের বউ।
শিমু আক্তার কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে,সে সভাপতির ছোট ছেলের বউ।সজীব হোসেন,নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে,সে সভাপতির নাতি।
মোহাম্মদ রিপন হোসেন বিজ্ঞান ল্যাব এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে,সে সভাপতির জামাই শিক্ষক উজাউল ইসলামের আপন ভাগনা।
মোহাম্মদ আব্দুল মমিন,পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে, সে সভাপতির ভাতিজা।
নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রিন্সিপাল,সভাপতি ও সভাপতির জামাই উজাউল এলাকার অপ্রচলিত পত্রিকায় গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ দিয়ে এভাবেই পরিবার তন্ত্র গড়ে তুলেছে। এই অধ্যক্ষ ও সভাপতি তাদের পারিবারিক কমিটির মাধ্যমে ১৯ টি পদে প্রায় দুই/আড়াই কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। মাদ্রাসার নামিয় চার একর সম্পত্তির ডাক এর অর্থ দীর্ঘদিন যাবত তারা আত্মসাৎ করে চলেছে।
উল্লেখ্য যে,সভাপতির জামাই উজাউল ইসলামের বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকলেও নিয়োগ বাণিজ্য করে সে বর্তমানে কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ তলা অট্টালিকার মালিক এবং প্রায় আট বিঘা জমি ক্রয় করেছে।
অধ্যক্ষ এর বাড়ি নির্মাণ ও জয়পুরহাট ইসলামী ব্যাংকের সংরক্ষিত অর্থ হিসাব করলে কোটি টাকা পার হয়ে যাবে।সরকারি প্রাপ্ত বরাদ্দকৃত ৫ লক্ষ টাকার চার লক্ষ টাকাই তারা আত্মসাৎ করেছে এই মর্মে অভিযোগ থাকলেও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতার বলে তাড়া রেহাই পেয়ে যায়।
এলাকার সচেতন নাগরিক হিসেবে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া ও দুর্নীতিগ্রস্ত সভাপতি অধ্যক্ষ ও সভাপতির জামাই উজাউলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আবেদন করা হয়।
এলাকাবাসীর পক্ষে ইউপি সদস্য আব্দুল করিম,সুলতান নাসিরুদ্দিন,মিঠু,লিটন, আব্দুর রাজ্জাক,শহিদুল,আব্দুল আলিম,মামুন,রাব্বি ও অত্র প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষার্থী জানান,এই অধ্যক্ষ,সভাপতি ও সভাপতির জামাই উজাউল মিলে ঐতিহ্যবাহী এই মাদ্রাসাটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।এদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
উত্র মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মোতালেব হোসেন বলেন,এই অধ্যক্ষ, সভাপতি ও উজাউল মিলে আমার চাকরি শেষ হওয়ার আগেই বাধ্য করে আমাকে চাকরিচ্যুত করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আমি এর বিচার চাই।
আরেক সাবেক শিক্ষক মোবারক হোসেন জানান,অবসরের আগে উজাউল ও প্রিন্সিপাল আমার কাছে থেকে জোর করে ৪২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।আমি ঐ টাকা ফেরত ও বিচার চাই।
মাদ্রাসা পাড়ার লিপি খাতুন জানান,অধ্যক্ষ,সভাপতি ও উজাউল আমার কাছে থেকে ৩ লক্ষ টাকা চাকরি বাবদ নিয়ে ও আমাকে চাকরি না দিয়ে বেশি টাকা নিয়ে অন্য একজনকে চাকরি দিয়েছে।আমি এর বিচার চাই।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।