আরিফ হোসাইন, ববি প্রতিনিধি
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মাথাপিছু ব্যয় ৫৭ টাকা।
ববিতে ৫০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বাজেটে ৬ লক্ষ টাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা মোট বাজেটের ০.১১৯ শতাংশ। এতে জনপ্রতি বরাদ্দ হয়েছে ৫৭ টাকা ৷ যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল মনে করছেন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীরা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তামাশা করছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, ২০৮ জন শিক্ষক ও ১১৬ জন কর্মকর্তা এবং ১৪৪ জন কর্মচারীর বিপরীতে এ বছর ছয় লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরে ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ অনেক কম দাবি করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রিফাত বলেন, মেডিকেলে স্বাস্থ্যসেবা খুবই নিম্নমানের। এখানে নাপা-স্যালাইন ও কিছু সর্দির ওষুধ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। তার উপর মাত্র ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রশাসন কতটা উদাসীন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত খন্দকার জানান, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না। নামমাত্র মেডিকেল সার্ভিস দিচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিকিৎসা সেন্টারটি। আমার কাছে এটাকে একটা প্যারাসিটামল সেন্টার মনে হয়। কারন, অসুস্থ হয়ে মেডিকেলে গেলে যদি ভুল করে খোলা থাকে তাহলে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, স্যালাইন ইত্যাদি জাতীয় প্রাথমিক ওষুধ ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর এই বাজেট খুবই নগন্য এবং দৃষ্টিকটু। এতে প্রশাসনের উদাসীনতার প্রকাশ পেয়েছে।
ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড.তারেক মাহমুদ আবির বলেন, মেডিকেল সেন্টারে এক্স-রে মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন,যেগুলো নেই। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ঔষধ না পেলে আমার কাছে অভিযোগ করে। তাই বাজেটটা আরেকটু বাড়াতে পারলে ভাল হতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. শাম্মী আরা নিপা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাত্র ৬ লক্ষ টাকা বাজেট দিয়ে মেডিকেল সেন্টার চালানো বা চিকিৎসা দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে বাজেটের উপরে তো আমাদের হাত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আমরা সাধারণত ৩ দিনের ঔষধ দেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের জন্য ১০ থেকে ১২ রকমের ওষুধ ক্রয় করা হয়। যা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া বিশেষ কোনো সেবা দেয়া সম্ভব হয় না।
অর্থ ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক
সুব্রত কুমার বাহাদুর বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জন্য বাৎসরিক ৫৭ টাকা বাজেট অবশ্যই অপ্রতুল। নির্বাচনের বছর এবং দেশের অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে এ বছর বাজেট কম দেয়া হয়েছে।আগামী বছর থেকে বাজেট বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মেডিকেলের সরঞ্জম কেনার জন্য আলাদা বাজেট রয়েছে।
এছাড়াও প্রয়োজন হলে এবং মেডিকেল অফিসার আমাদের কাছে চাইলে আমরা বিশেষভাবে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
স্বাস্থ্যসেবায় বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকুলতারব প্রভাব সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েছে, কিন্তু সমসাময়িক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট অনেক কম হওয়া দুঃখজনক।এতে শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত সেবা পাবে না। আমরা বছরের মাঝামাঝি যে রিভাইস বাজেট দেয়া হয় সেখানে পরিমাণটা বৃদ্ধি করে দেব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে যোগাযোগ করলেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ##