স্টাফ রিপোর্টারঃ
নদী ভাঙন এখন বাকেরগঞ্জের মানুষের কাছে একটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার এই ভাঙনের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেচে আছে এলাকার মানুষ। প্রতি বছরই ভয়াবহ ভাঙন বাড়ছে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ ভাঙন আরো প্রকট আকার ধারণ করে বিলীন হয়ে যায় ঘরবাড়ী,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ,রাস্তাঘাট,ব্রিজ,কালভার্ট,গাছপালা ও ফসলী জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। গৃহ ও ভিটে মাটি হারিয়েছে এ এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে অব্যহত ভাঙনের ফলে বাকেরগঞ্জের স্থলভাগের মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে, নদী ভাঙনে যারা সর্বস্ব হারিয়েছে তাদের ঠিকানা এখন ভূমিহীনদের তালিকায়। কারো ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধের উপর আবার কেউ কেউ জীবন জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকা শহরে বা স্থানীয় শহরের কোন বস্তিতে।
এ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কোল ঘেসে বয়ে গেছে ৬ টি বড় নদী যা প্রতিনিয়ত তীব্র হয়ে ভেঙে যাচ্ছে যার সম্পূর্ণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গরীব খেটে খাওয়া মানুষদের।
ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ গ্রামের নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা আল-আমিন মোল্লা জানান, অনেক বছর পর্যন্ত একইভাবে তার ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুলাতলী নদীর ভাঙন দেখছেন, এই ভাঙনে তাদের প্রায় ২ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ভিটেটুকু অবশিষ্ট আছে এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে জলদি হয়তবা তাদের পথে বসতে হবে।
একই গ্রামের দুধলমৌ আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন আক্তার রিনা বলেন, আমার স্কুল সংলগ্ন প্রায় ৫০ টি বাড়ী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, স্কুলে কাঙ্ক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীর সংকট দেখা দিয়েছে তাছাড়া স্কুল সংলগ্ন বায়তুল আমান জামে মসজিদটি এই মৌসুমের যে কোন মুহূর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে অব্যহত ভাঙনের ফলে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ ছাড়া এ উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানবৃন্দরা জানান, রাঙ্গামাটি নদী,পান্ডব নদী তেতুলিয়া নদী,কারখানা নদী,বিষখালী নদী,তুলাতলী নদীর তীরবর্তী চরামদ্দি ইউনিয়নের কাটাদিয়া বাজার,চরাদী ইউনিয়নের হলতা বন্দর পূর্ব ও দক্ষিণ বলইকাঠী ও ছাগলদী গ্রাম,দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাঠকাঠী,জিরাইল ও দিঘিরপাড় গ্রাম, ফরিদপুরের মঙ্গলসী,গোমা,রোকনদ্দী ও ফরিদপুর গ্রাম,কবাই ইউনিয়নের শিয়ালঘুনি ও সোনাকান্দা গ্রাম এবং কবাই ও লক্ষীপাশা বাজার,নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশ্চিম উত্তর নলুয়া ও মৌকরণ গ্রাম,কলসকাঠী ইউনিয়নের বেবাজ,ঢাপরকাঠী ও নারায়ঙ্গল, সদিশ আমতলী গ্রাম,গারুড়িয়া ইউনিয়নের কাটাখালী ও খয়রাবাদ গ্রাম,ভরপাশা ইউনিয়নের দুধলমৌ ও লক্ষীপাশা গ্রাম,নিয়ামতি ইউনিয়নের নিয়ামতি বন্দর এবং বাকেরগঞ্জ পৌরসভা সহ অনেক বাজার, বন্দর ও গ্রাম অব্যহত ভাঙনের ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে,আতংক বিরাজ করছে সর্বত্র।
ভরপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খান বলেন,কয়েক বছর যাবৎ দুধলমৌ গ্রামের ভাঙন প্রতিরোধের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মানুযায়ী তদবির করেও এখনো কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
কবাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জহিরুল হক তালুকদার জানান, শিয়ালঘুনিতে কারখানা নদীর ভাঙনে অনেকের সাথে আমার নিজের বসত বাড়ীটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, তা ছাড়াও এখানকার সাইক্লোন শেল্টার ও জমিরউদ্দীন মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন ভাঙনের তীব্রতার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাকেরগঞ্জে নদী ভাঙনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোর ব্যাপারে আমরা অবগত আছি, ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বরাদ্দ এলেই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম নাসরিন জাহান রতনা জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার নদীগুলো তীব্র ভাঙন কবলিত যা, জনস্বার্থে প্রতিরোধ করা জরুরী বিধায় ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ অব্যহত রেখেছি এবং ব্যাপক ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনপূর্বক চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রায় ১শ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা রাখি।