মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি
নওগাঁ জেলাধীন বদলগাছি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিতছোট যমুনা নদীর বালুমহালের বালু উত্তোলনের নামে নদী তীর সংলগ্ন ফসলী জমির মাটি কাটার অভিযোগে নওগাঁর আদালতে সুয়োমটো মামলা হয়েছে!
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও জেলা এডভোকেট বার এসোসিয়েশন, নওগাঁর বিজ্ঞ আইনজীবী শাহানূর ইসলাম সৈকত গত ২০শে ফ্রেব্রুয়ারী জনস্বার্থে বদলগাছি থানার এখতিয়ার সম্পন্ন নওগাঁর বিজ্ঞ আমলী আদালতে এ সংক্রান্তে দৈনিক করতোয়াসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ প্রদর্শন ও উত্থাপনপূর্বক বিজ্ঞ বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা করেন।
আমলী আদালত ০৫, নওগাঁর বিজ্ঞ বিচারক মোঃ সাইফুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের গুরুত্ত্ব অনুধাবন করে অভিযোগটি ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(সি) ধারা মতে আমলে গ্রহণ করে সুয়োমোটো মামলা গ্রহন করেন এবং আগামী ১১ এপ্রিল ২০২২ তারিখের মধ্যে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বদলগাছি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্তকে) নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালত মামলার আদেশে উল্লেখ করেন যে, গত ১০/০২/২২ খ্রী:তারিখে দৈনিক করতোয়া পত্রিকার তৃতীয় পাতায় “বদলগাছিতে নদীপারের ফসলী জমির মাটি কেটে অবাধে বিক্রয় করা হচ্ছে” শিরোনামে প্রকাশিত গুরুত্ত্বপূর্ন সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায় যে,বদলগাছির গুরুত্ত্বপূর্ণ নদী তথা ছোট যমুনা নদী এলাকায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ও আইন লংঘন করে নদীর মাটি,বালু উত্তোলন এবং স্থানীয় বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধকে হুমকিতে ফেলে প্রকাশ্যে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
উক্ত সংবাদ ও অভিযোগ বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপণা আইন ২০১০ এর ধারা ৪/১৫ ও বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ এবং বিধিমালা ২০১৮ এর লংঘন মর্মে আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।
এমতাবস্থায়,জনস্বার্থে ও ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যে উক্ত ঘটনায় অপরাধ উদ্ঘাটন ও আসামীদের চিহ্নিতকরণ এবং উল্লেখিত আইন ছাড়াও অন্য কোন আইনে অপরাধ হয়েছে কিনা তা বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মর্মে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়।
উক্ত উদ্দেশ্যে উল্লেখিত সংবাদটি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(সি)ধারার আমলে নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত),বদলগাছী থানা,নওগাঁকে স্বয়ং সরেজমিনে তদন্তপুর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ১১/০৪/২২ খ্রীঃ তারিখের মধ্যে দাখিলের জন্য আদালত নির্দেশ প্রদান করেন।
ঘটনায় জানা যায় যে,নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী বালু শুন্য হলেও বন্ধ হচ্ছে না সরকারিভাবে লিজ প্রক্রিয়া। নদীতে বালু না থাকায় নদী লিজের নামে বালু ব্যবসায়ীরা ফসলসহ কেটে নিয়ে যাচ্ছে নদীর দু’পারের তিন ফসলি জমির মাটি।
নদীপাড়ের কয়েক জন ভুক্তভোগী বলেন, বালুমহাল লিজ কাকে বলে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। সরজমিনে দেখা যায়, কাষ্টডোব খাগড়া মৌজায় বালুমহাল ইজারাদার গাছপালা উপড়ে ফেলে আলুক্ষেত, পটলক্ষেতসহ তিন ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গভীর করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ফুট। তাতে আশপাশের ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে।
কৃষকরা জানান, স্যার নাকি তাদের কাটার আদেশ দিয়েছেন। তাই তারা ফসলসহ মাটি কাটছে। মালিকানা জমি নষ্ট হচ্ছে কোন বাধা নিষেধ তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ভূমি অফিসসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
অপরদিকে নালুকাবাড়ী গুচ্ছগ্রামের পাশেই বালু কাটার মহোৎসব চলছে। ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ২০/৩০টি ট্রাক্টর একই ভাবে মাটি বহন করছে। সেখানেও কাটা হচ্ছে ফসলি জমি।
নালুকা বাড়ি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমরা বিভিন্ন কর্মকর্তা ব্যক্তির কাছে ঘুরছি কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এভাবে মাটি কাটলে গুচ্ছগ্রাম রক্ষা হবে না। বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে গেলে পানির স্রোত সরাসরি গুচ্ছগ্রামে এসে আঘাত হানবে তখন এখানকার আবাস নিচিহ্ন হয়ে পড়বে।