27.3 C
Bangladesh
Friday, November 15, 2024
spot_imgspot_img
Homeঅভিযোগবিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রতারণার অভিযোগে নওগাঁয় একজন আটক

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রতারণার অভিযোগে নওগাঁয় একজন আটক

মুজাহিদ হোসেন, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ

বিদেশে শ্রমিক পাঠানো, প্রবাসী শ্রমিকদের আকামা এবং ভালো কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
১৭ জুলাই,শনিবার দুপুরে এক ভুক্তভোগীর বাবা মানব পাচার দমন আইনে চারজনের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, শিকারপুর ইউনিয়নের চককালিদাস গ্রামের কমর উদ্দিন সরদারের ছেলে প্রধান আসামী সবুজ হোসেন, একই গ্রামের ইয়াকুব আলী সরদারের ছেলে আব্দুল খালেক, মকবুল হোসেনের ছেলে আবুল কালাম আজাদ এবং সবুজ হোসেনের মা রাবেয়া বেগম ওরফে ভুদি।
মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান আসামী সবুজ হোসেনকে গ্রেফতার করে ১৭ জুলাই,শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে প্রায় ১৪ বছর আগে সবুজ হোসেন স্ত্রী ও পরিবার রেখে পাড়ি জমান সৌদিতে। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতেন। এক সময় সবুজ নিজেই ‘শ্রমিক সরবরাহ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এইসব শ্রমিকদের সৌদিতে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ কাজে সরবরাহ করতেন তিনি। গত কয়েক বছর থেকে গ্রামের যুবকদের তার প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার নামে প্রলোভন দেন। এলাকার যুবকরা কেউ জমি বিক্রি ও ঋণ করে টাকা নিয়ে সৌদিতে পাড়ি জমান।

ওইসব যুবকরা সবুজের অধীনে কাজ করলেও তাদের ঠিকমতো বেতন দেয়া হতো না। এছাড়া আকামা করে দেওয়ার নামে সবুজ সৌদি থেকেই তার মায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারের নিকট থেকে টাকা নিতো। টাকা নেয়ার পর সবুজ আকামা করে না দিয়ে তাদের ঘুরাতেন। আর পুলিশ আটক করে জেলে দিবে সে আতঙ্কে রয়েছেন প্রবাসীরা।

স্থানীয় চককালিদাস গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আয়নাল হোসেন, আব্দুল জব্বারের ছেলে হোসেন আলী, আতোয়ার রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান, গোয়ালী গ্রামের ইয়াদ আলী মণ্ডলের ছেলে আইজুল মণ্ডল, রঘুনাথপুর গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে জুয়েল হোসেন, রমজান আলীর ছেলে সাইদুল ইসলামসহ ১৯জন যুবকের পরিবার থেকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসামীদের সহায়তায় প্রায় ৭৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সবুজ হোসেন।

গত ২৫ জুনে সবুজ হোসেন সৌদি থেকে গ্রামের বাড়ি আসেন। এরপর ভুক্তভোগী ৭টি পরিবারের সদস্যসহ প্রতারিত ১৯টি পরিবারের সদস্যরা সবুজের বাড়িতে দেখা করতে যায়। প্রবাসে ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অথবা তাদের বৈধ কাগজপত্র করে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

এসময় সবুজ তাদের জানায়, যাদের সৌদিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তারা সবাই ভাল আছে। ভুক্তভোগীরা সবুজের বাড়িতে যাওয়া বিরক্ত বোধ করেন এবং তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। অসহায়রা প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেয়ার হুমকি দেয় সবুজ।

মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছেলে রুবেল হোসেনকে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে ভালো বেতনে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সবুজ হোসেন। এরপর আসামী আব্দুল খালেক ও আবুল কালাম আজাদ এর উপস্থিতিতে সবুজের মা রাবেয়া বেগমকে ২০১৯ সালের অক্টোবরের ১০তারিখে ৬ লাখ টাকা দেই। সে সময় সবুজ সৌদিতে অবস্থায় করছিল। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে ছেলেকে সৌদিতে নিয়ে গিয়ে তার কাছে রেখে ভালো কাজ ও বৈধ কাগজপত্র করে দেওয়ার কথা বলে।

কিন্তু ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো বৈধ কাগজপত্র ও ভালো কাজ না দিয়ে পাসপোর্টসহ জরুরি কাগজপত্র জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে তার তত্ত্বাবধানে কাজ করে নেয়। বিনিময়ে কোন মাসিক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়না। শুধু মাত্র সামান্য কিছু খাবার খরচ দেয়।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো কাজ ও বৈধভাবে কাজের অনুমতি নিয়ে দিতে পারেনি। বর্তমানে অবৈধভাবে সেখানে মানবেতর জীবন যাবন করছে। অন্য স্থানে কাজের কথা বললে ছেলেকে নানাভাবে ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বর্তমানে ছেলে সৌদিতে অনিরাপত্তায় এবং মানবেতর জীবন যাবন করছে।

সৌদিতে অবস্থানকারী প্রতারিত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী নিপা বেগম বলেন, এ বছরের জানুয়ারিতে আমার স্বামীকে সৌদিতে ৬ লাখ টাকার চুক্তিতে নিয়ে যায় সবুজ। তারপর আবার কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে আরো তিন লাখ টাকা নেয়। ছয়মাস তার মাধ্যমে কাজ করে তিনলক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু স্বামীকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। স্বামী ফোন দিয়ে কান্না করে বলে বর্তমানে খুব কষ্টে আছে।

তিনি আরো বলেন, স্বামী বাড়িতে কোনো টাকা পাঠাতে না পারায় অনেক কষ্টে সংসার চলছে। সবুজ একই এলাকার ছেলে হয়ে এমন প্রতারণা করতে পারলো। এর সঠিক বিচার চাই। স্বামীসহ যারা বিদেশে কষ্টের মধ্যে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অথবা বৈধ কাগজপত্রের ব্যবস্থা করে কাজ দেওয়ার দাবী জানান তিনি।

নওগাঁ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মানব পাচার দমন আইনে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান আসামী সবুজ হোসেনকে গ্রেফতার করে শনিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য তিন আসামী পলাতক রয়েছে। তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কয়েকজন প্রতারণার স্বীকার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। আমরা এই প্রতারণা চক্রটির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে বৈধ কাগজপত্র না দিয়েই প্রতারণা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Most Popular

Recent Comments