19.8 C
Bangladesh
Sunday, November 17, 2024
spot_imgspot_img
Homeপ্রতিবেদনবিলুপ্ত‌র পথে সাতক্ষীরার ঐতিহ্য বাহী পরিবহন গরুর গাড়ি

বিলুপ্ত‌র পথে সাতক্ষীরার ঐতিহ্য বাহী পরিবহন গরুর গাড়ি

ফেরদাউস মোল্লাঃ-

আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর-ধু সানাই বাজিয়ে’ অথবা ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া, ইত্যাদি গান এক সময় গাড়িয়ালের সাথে সাথে গ্রামবাংলার সহজ সরল মানুষ মুখে মুখে গেয়ে ফিরত সারাক্ষণ। আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও দুর্গম মেঠো পথের একমাত্র পরিবহন গরুর গাড়ি কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

এক সময়ে মানুষের মালামাল পরিবহন ও দূর দূরান্তে যাতায়াতের জন্য দুই চাকাবিশিষ্ট গরু গাড়িই ছিল একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু আজ আর সেই ইনঞ্জিন বিহীন গাড়ী চোখে পড়েনা। কালের পরিক্রমায় আর যান্ত্রিকযুগের প্রযুক্তির ছোয়ায় সেই পরিবেশ বান্ধব পরিবহন আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।

বৃহৎ আকৃতির গোলাকার বাবলা কাঠের তৈরী দুটি চাকা বিশিষ্ট গাড়ির বডি তৈরী করা হয় বাঁশ ও বাঁশের চটা দিয়ে যার পেছনের দিকে ২ থেকে আড়াই ফুট চওড়া, আর সামনের দিকে সরু হয়ে মাত্র ১ ফুট থাকে। ১২ থেকে ১৪ ফুট দুটি লম্বা বাঁশের মাঝাখানে বাঁশের চটা দিয়ে তৈরী বডির প্রায় মাঝামাঝি অংশে সেই বৃহৎ আকৃতির চাকা দুইটি কাঠের তৈরী ঝুরা বা এক্সেল লাগিয়ে দেওয়া হয়। সামনের দিকে গরুর ঘাড়ে বাঁধানোর জন্য আড়া-আড়িভাবে দেওয়া হয় ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা বাঁশের জোঙ্গাল। মালামাল বহনের জন্য গাড়ীর উপরে বেড়া লাগানো হয় গ্রামগঝেঞ্জ যাকে ঝোড়া বলে। আর মানুষ বা নতুন বর কনে বহনের জন্য ব্যবহার করা হয় ছাউনী, শাড়ী কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় সেই ছাউনী গুলি। যেটাকে গ্রামের মানুষ সইয়ে গাড়ী বলে। আর এই সব কাঠ ও বাঁশের তৈরী গরু গাড়িগুলি অধিকাংশ লোক জীবন জীবিকার তাগিদে ভাড়ায় ব্যবহার করতো। মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণির লোকেরা ঐতিহ্য ও ব্যক্তিত্বের জন্য নিজেরা কর্মচারী রেখে গাড়ি ব্যবহার করতো।

সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায় এক সময় এই গরুর গাড়ি তৈরী করে অনেক পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গরু গাড়ি তৈরীর মিস্ত্রিদের ছিল ব্যাস্ততা। দম ফেলার ফুসরত থাকতোনা তাদের। আজ যান্ত্রিক যুগের দাপটে সে সব কেবলই স্মৃতি। আজ আর মিস্ত্রি পাড়ায় বাজেনা হাতুড়ির শব্দ। নিশ্চুপ হয়ে গেছে গরু গাড়ী তৈরীর কারখানাগুলি।

উপজেলার কোড়া গ্রামের গাড়ি তৈরীর মিস্ত্রি আব্দুল খালেক হাসান আলি ।

আজ আর তা চোখে পড়েনা যন্ত্র চালিত গাড়ি ঘোড়ার কারণে সবই হারিয়ে গেছে। এবিষয়ে সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ তিতুমীর বলেন, ডিজিটাল যুগে মানুষ এখন আর এসব আর ব্যবহার করতে চায়না। কিন্তু আমরা বাঙালি আর গরু গাড়ি বাঙালিদের ঐতিহ্য, এখনও দুর্গম মেঠো পথে বাঙালি ঐতিহ্য গরু গাড়ি দেখা যায়। আর এভাবেই এটা হয়তো যুগযগ টিকে থাকবে।

Most Popular

Recent Comments