আবদুল্লাহ আল মামুন:
১৭ জুলাই বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব সুবেদার মনির আহম্মদ’র ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকী দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে পালিত।
১৯২৯ সালের ১জুলাই ফেনী’র সোনাগাজী পৌরসভাধীন ৯নং ওয়ার্ড চরগনেশ গ্রামের ঐতিয্যবাহী বক্স আলী ভূঞা বাড়ীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুরাদেরজ্জামান, মাতার নাম ওজিফা খাতুন।
প্রাইমারি পেরিয়ে তিনি উপজেলার মতিগঞ্জ আর এম হাট কে উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হন, মাধ্যমিকে অধ্যয়ন অবস্থায় ফুটবল খেলায় দারুন আকর্ষণ এর কারনে সোনাগাজী ফুলবল একাদশের হয়ে বিভিন্ন জেলায় ফুটবল খেলার ডাক পেতেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৫২ সালে নোয়াখালী স্টেডিয়ামে
ফুটবল খেলতে গিয়ে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস(ইপিআর) সৈনিক রিক্রুট টিমের নজরে এলে পুরো সোনাগাজী একাদশ কে সৈনিক এ ভর্তি হওয়ার আহবাণ জানালে পরের দিন ভর্তি লাইনে দাঁড়ালে টিমের চাচাতো-জেঠাতো ভাই ৬জন সিলেকশান হন এবং ১৯৫২ সালের ১মার্চ ইপিআর’র যোগদান করেন। পরবর্তিতে শুধু মাত্র তিনিই ইপিআর’র থেকে যান (বিডিআর বর্তমান বিজিবি)।
অন্য ৫জন সেনাবাহিনী, পুলিশ, রেল পুলিশ বাহিনীতে চলে যান।
১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ এর প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা ইপিআর’র ওয়ারল্যাস
ম্যাচেজে পাওয়ার পর পরই ইপিআর’র বাঙ্গালী সৈনিকদের সাথে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এর মুখে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ আরম্ভ করেন, পাকিস্তানি সৈন্যদের ভারী অস্ত্রের মুখে বেশীক্ষণ টিকতে না পেরে কুমিল্লা শহরের দিকে পিছু হটে পুনঃরায় সংঘঠিত হয়ে খন্ড খন্ড প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন, পরবর্তিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাঙ্গালী সেনা, ইপিআর, পুলিশ ও মুক্তিবাহিনী এবং পরবর্তীতে ভারতীয় বাহিনী নিয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীসহ মাতৃভুমি শত্রু মুক্ত করতে ২নং সেক্টরের কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমর যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং দখলদার বাহিনী কে পরাজিত করে লাল-সবুজের পতাকা চিনিয়ে আনেন। বাংলাদেশ নামে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নিল নুতন স্বাধীন দেশ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ অনুষ্টানে বিজয়ের বেশে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
পরবর্তিতে ১৯৭২ সালে ৩১ জানুৃয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্টানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মাতৃভুমির সীমান্ত রক্ষায় সততা ও নিষ্টার সহিত অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৮৪ সালের ৯এপ্রিল কর্মজীবন শেষে অবসরে আসেন তিনি।
জীবনের বাকী সময় জন্মস্থানে সামাজিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করেন।
২০০৭ খ্রিঃ ১৭জুলাই নিজ জন্মস্থানে বার্ধক্য জনিত কারনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার ১৬তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মরহুমের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করছি।
আমিন