মোবাইল ফোন সেবার ওপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে আগের মতোই ১০ শতাংশ সম্পূরক থাকবে। এবারের বাজেটে এই সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট ঘোষণার পরপরই তা কার্যকরও হয়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কাল সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০ সালের অর্থবিল পাস করার সময় অর্থমন্ত্রী বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। মোবাইল ফোনে কথা বলা, খুদে বার্তা পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়।
বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হয়ে যায়। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, খুদে বার্তাসহ অন্যান্য সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়। সব মিলিয়ে এখন ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সরকার পায় ২৫ টাকা। সম্পূরক শুল্কহার আবার আগের জায়গায় ফেরত গেলে সরকার পাবে ২২ টাকা। আর গ্রাহক ৭৮ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন। বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ৩ টাকা।
বাজেট ঘোষণার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটররা বাড়তি সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানায়। এতে গ্রাহকদের খরচ বেড়েছে বলে তারা জানায়।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটেও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবারের বাজেটে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও আপিল কমিশনারেটে আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে দাবিকৃত ভ্যাটের ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ বা জমা রাখার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ কোটি টাকার ভ্যাট বাড়তি
দাবি করল। এত দিন ওই ভ্যাটদাতা চাইলে দাবিকৃত ভ্যাটের ১০ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকা জমা করে আপিল দায়ের করতে পারতেন। নতুন প্রস্তাবে ওই ব্যবসায়ীকে ২০ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। বাজেট ঘোষণার পরপরই ব্যবসায়ীরা এই প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে এখন তা আগের ১০ শতাংশ হারে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুল্ক-করের ২২ হাজারের বেশি মামলা আছে। এসব মামলায় অনাদায়ি পড়ে আছে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব।
এবার ভ্যাট আইনের ৪৭ নম্বর ধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি করযোগ্য সরবরাহ পর্যায়ে কোনো নির্দিষ্ট কর মেয়াদে যে পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করেন, ওই ব্যক্তির প্রাপ্য উপকরণ কর রেয়াত সেই পরিমাণের ভিত্তিতে নিরূপণ হবে। এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে কোনো ব্যবসায়ী ১০০ টাকার উপকরণ কিনলে পুরোটাই ফেরত পাবেন। প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্নেও সময় দেওয়া উপকরণ ব্যবহারের হিসাব অনুযায়ী রেয়াত নিতে হবে না।
এবারের বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ছয় দিনের মধ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এই বাধ্যবাধকতার প্রস্তাবও প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
খবরঃপ্রথম আলো