রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
সালিশ বৈঠককে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বসতঘর। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন বাজারে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটে।
পরে রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও নৌবাহিনীর রাঙ্গাবালীতে দায়িত্বরত কন্টিনজেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মহসিন কবির মৃধার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বুধবার বিকেল ৫ টায় এ প্রতিবেদন পাঠানোর আগ পর্যন্ত এ ঘটনায় রাঙ্গাবালী থানায় কোন অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরবেষ্টিন গ্রাম সংলগ্ন মাঝেরচর এলাকায় এক জেলে ট্রলারে কাজ করা তিন জেলে শ্রমিকের বেতন না দেওয়া নিয়ে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। সেখানে ট্রলার মালিক পক্ষ এবং তিন জেলে শ্রমিকের বিরোধ মীমাংসা করতে আলাদা আলাদাভাবে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লোকজন হাজির হয়। এতেই হট্টগোল বাঁধে। ছাত্রদল-ছাত্রলীগের লোকজনের মধ্যে বাকবিতÐা হয়।
এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যায় চরবেষ্টিন বাজারে গিয়ে বিএনপির স্থানীয় কার্যালয় ভাংচুর করে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা। সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। খবর পেয়ে বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বাজারে আসলে তাদের সঙ্গে হট্টগোল বাঁধে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের। শুরু হয় সংঘর্ষ। পরে রাজনৈতিক এ সংঘর্ষ হঠাৎ ভিন্নভাবে রূপ নেয়। চরবেষ্টিন এবং পাশের গ্রাম চররুস্তুমের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চরবেষ্টিন বাজারের একপ্রান্তে ১ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ, আরেক প্রান্তে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ অবস্থান নিয়ে দুই প্রান্ত থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ দফায় দফায় রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত চলতে থাকে। পরে রাত ১০ টার দিকে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যৌথবাহিনীর খবর পেয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। তবে এখনও ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
স্থানীয় সূত্রের তথ্যমতে, এতে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হয়। গুরুত্বর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাশর্^বর্তী উপজেলা গলাচিপা ও জেলা শহর পটুয়াখালীতে পাঠানো হয়। সংঘর্ষে আহত চরমোন্তাজ ইউনিয়ন আনসার ও ভিডিপি কমান্ডার ফজলুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু লোকজন বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। ব্যাপক লোকজন আহত হয়। আমি নিজেও ইটের আঘাতে আহত হয়েছি।’ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও চরমোন্তাজ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চরবেষ্টিন বাজারের অবস্থিত ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয় অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে আওয়ামী লীগের লোকজন। তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং দোকানপাটও ভাংচুর চালায়। ওই এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের লোকজন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।’
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় কেউ এখনও কোন অভিযোগ কিংবা মামলা করেনি। মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৪০ জনের মত আহত হয়েছে। ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দুইটি বসতঘর ভাংচুর করা হয়েছে বলে জেনেছি। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমি নৌবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। যৌথবাহিনী আসার খবর পেয়ে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।