রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী শহরের বিভিন্ন মোড়গুলোকে ছাত্র অভ্যুত্থানে হওয়া শহীদদের নামে ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সোমবার (১২আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সারাদেশে চলমান আওয়ামী প্রোপাগাণ্ডা এবং অন্যান্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এসব ঘোষণা দেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “গত ৫ তারিখে আকাঙ্খিত বিজয় অর্জনের দিনে স্বৈরাচার হাসিনার দালাল খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে রাজশাহীতে আমাদের তিনজন ভাইকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সেই তিনজন ভাইকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে চাই। সেজন্য তিনজন শহীদ ভাইয়ের নামে তিনটি চত্বরের নাম ঘোষণা করে দিচ্ছি। সেটা প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আপনার আমার। এদেশে সরকার নেই প্রশাসন নেই কিন্তু কয়েকদিন ছাত্রসমাজ খুব ভালোভাবেই দেশ চালাতে পেরেছে। তাই এই চত্বর প্রতিষ্ঠিত করাটা আমাদের জন্য খুব বড় বিষয় না।”
তিনি আরও বলেন, “এখন থেকে রাজশাহী শহরের আলুপট্টি মোড়কে শহীদ আলী রায়হান চত্বর নামে ঘোষণা করছি। সাগরপাড়া মোড়কে আমরা রাজশাহী প্রথম শহীদ শাকিল চত্বর ঘোষণা করছি। আমাদের আন্দোলনের সূচনা এবং বিজয় যেখান থেকে হয়েছে সেই তালাইারী মোড়কে আমরা ‘বিজয় ২৪’ চত্বর নামে ঘোষণা করছি। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদের জন্মদাতা মুজিব চত্বরের উটপাটন করে সেটাকে ‘বিজয় ২৪’ চত্বর ঘোষণা করা হল এবং শহীদ সাকিব আনজুম ভাইয়ের স্মরণে নগরী ভদ্রার মোড় হবে শহীদ শাকিব আনজুম চত্বর।”
রুয়েট প্রতিনিধি নাইম উদ্দীন বলেন, আপনারা জানেন ৫ই আগস্ট আমরা আমাদের ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করেছি।সৈরাচর আমাদের আল্টিমেটাম দিয়েছিল সাত দিনের মধ্যে আমাদের মাঠ ক্লিয়ার করে দিবে। কিন্তু তারা এক মিনিটও মাঠে টিকতে পারেনি। তারা পিছনের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু সৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার আগে শেষ মরণ কামড় হিসেবে রাজশাহীর তিনজন ভাইকে শহীদ করে গেছে। আমরা আমাদের ভাইদের ভুলে যায়নি। আমরা সাঈদ ভাইকে ভুলে যায়নি, আমরা মুগ্ধ ভাইকে ভুলে যায়নি। আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত এখনো আমাদের প্রতিটি শিরায় শিরায় প্রবাহমান। সৈরাচার পালিয়ে এখন ভারতের দিল্লিতে বসে আমাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সৈরাচারের এই চেষ্টা সফল হতে দিব না। প্রয়োজন হলে আরও একটি রক্তের নদী বয়ে যাবে। সৈরাচারীর সকল ষড়যন্ত্রকে আমরা রক্তের নদীতে ভাসিয়ে দিব। আমরা ছাত্রসমাজ একতাবদ্ধ হলে এই বাংলার বুকে সৈরাচারের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে পারবে না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, আপনারা জানেন ৫ আগস্ট আমরা এই বাংলাদেশে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু এই বিজয় অর্জনের পরও পরাজিত শক্তি বসে নেই। এই পরাজিত শক্তি দিল্লি থেকে কলকাঠি নাড়াতে ব্যস্ত। দিল্লি থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে আর এই বাংলাদেশকে অস্থীতিশীল করা চলবে না। বাংলাদেশের আপামার ছাত্র জনতা বুকের রক্ত দিয়ে বিজয় অর্জন করতে শিখেছে তারা বিজয় রক্ষা করতেও জানবে। আমরা আজ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে চাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখনও দমে যায় নাই। আমাদের ঘোষণা গণভবন থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেই ছাড়বো।
তিনি আরও বলেন, আমরা আজকের এই জমায়েত থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আপনি এই খুনি, স্বেরাচারী আওয়ামী লীগকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন এই মন্তব্যের জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহলে ছাত্র-জনতা যে জায়গায় আপনাকে বসিয়েছে সেই জায়গা থেকে নামতে ২ বার ভাববে না। কোন অবস্থাতেই ছাত্র-জনতার ম্যাগনেটের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন না। এই বাংলার বুকে আওয়ামী স্বৈরাচারের আর কোনদিন জায়গা হতে পারেনা।
রাবির শিক্ষক ড. শাহ হুসাইন আহম্মেদ মাহাদি, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাশাসক হিসেবে আখ্যায়িত দিয়ে তিনি বলেন, সেখ হাসিনা বাংলাদেশের নির্বাচনকে ধ্বংশ করে দিয়েছে। দিল্লির সহযোগিতায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় চেপে বসেছিলো।সেই খুনি হাসিনা আবার দিল্লিতে পালিয়ে গিয়েছে। দিল্লির মসনদে যারা আছে তারা খুনি হাসিনার সাথে থাকবেন নাহ ছাত্র-জনতার পাশে থাকবেন নাহলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে নাহ।
যারা সারাবাছর স্বৈরাশাসক, ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিলো তারা এখন মায়া কান্না করছে। তাদের চোখ দুটো তুলে দিতে তাদের হাত দুতো ভেঙ্গে দিতে হবে। তারা বলছে বিপ্লব মানি সম্পদের ধ্বংশ মানি নাহ। আমি তাদের বলবো সম্পদ ফিরে আসবে কিন্তু আবু সাইদ ফিরে আসবে না, আলী রায়হান ফিরে আসবে না, সাকিব আনজুম ফিরে আসবে না। তিনি আরো বলেন একশ্রেনির বুদ্ধিজীবী ও বাকশালের প্রচার বলছে ছাত্ররা আন্দোলন করেছে ঠিক আছে কিন্তু তাদের উপদেষ্টা করা ঠিক হয়নি। তাদের মুখে জুতার বারি। যারা আন্দোলন করেছে তাদের চেতনা বাস্তবায়নে জন্য অবশ্যই ছাত্র প্রতিনিধি থাকতে হবে। তিনি হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই উল্লেখ করে বলেন আমরা চাইনা হিন্দুদের বাড়ি আক্রমন হোক।
সহ-সমন্বয়ক ফাহিম আহমেদ বলেন, তারা নাকি আমাদের এক দফা কে রুখে দিবে? আবার শুনছি আওয়ামী লীগ নাকি শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে। আমরা দেখেছি, তারা ডাকাত, মন্দিরে হামলাকারী, চুর ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে ফিরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিল পালাবে না, কিন্তু পালিয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জানিয়ে দিতে চাই, আপনার দু’হাত রক্তে রঞ্জিত। আপনি পিলখানায়, শাপলা চত্বর ও ছাত্রদের উপর সহ মোট তিন বার গণহত্যা চলিয়েছেন। যতদিন পর্যন্ত খুনি হাসিনার ফাঁসি বাংলাদেশের মাটিতে না হবে ততদিন পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাঠে থাকবে। সরকার ফ্যাসিবাদের যে বীজ রেখে গেছে, ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশন সহ সব জায়গাতেই ধুয়ে পরিষ্কার করা হবে। আপনারা দেখেছেন, সিটি কর্পোরেশনে বুলেট, রামদা সহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র যেগুলো রাজশাহীবাসীর উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। তাই যতদিন পর্যন্ত এর বিচার না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজশাহীবাসী এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজপথ ছাড়বে না।