রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের একাংশের বিরুদ্ধে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়া, অপ্রাসঙ্গিক গল্প করা, কোর্স শেষ না করা, নির্দিষ্ট সময়ে পরিক্ষা ও রেজাল্ট না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। ফলে বিভাগগুলোতে তীব্র সেশনজটসহ বিভিন্ন একাডেমিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এসকল সমস্যার সমাধানে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করার দাবি জানাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরাও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কিছু শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নেন না, জ্ঞানভিত্তিক লেকচার দেন না, কোর্সের বিষয়বস্তু কেমন তা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্পষ্ট করেন না, নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স শেষ করেন না, ক্লাসের পরিবেশ আকর্ষণীয় এবং প্রাণবন্ত করতে পারেন না, শ্রেণিকক্ষে আরামদায়ক একাডেমিক পরিবেশ তৈরি করতে পারছেন না ও পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট ঠিকমতো নেন না। এসকল সমস্যার সমাধানে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়ন পদ্ধতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, আইন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিকার্থীরা বিভাগের সমস্যা নিরসন ও সংস্কার দাবিতে শিক্ষক ও উপাচার্য বরাবর বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছেন। উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের পদ্ধতি চালুকরণও ছিল।
পাঠদান মূল্যায়ন বিষয়ে নাঈমা জান্নাত নামের রাবির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা দেখতে পাই অনেক শিক্ষক সময় মতো ক্লাসে আসেন না এবং সময় মতো ক্লাস শেষ করেন না। আবার, ক্লাসে পড়াশোনা বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ক্লাস শেষ করে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন হওয়ার পিছনে কারণ হলো, শিক্ষকদের মূল্যায়ন করার মতো কেউ থাকে না। তাদের উপরে কোন তদারকির ব্যবস্থা নেই। যদি প্রমোশনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে তাকে প্রমোশন দেওয়া হতো, তাহলে শিক্ষকরা যত্নের সাথে পাঠদান করাতো। তাই আমরা মনে করি শিক্ষকদের পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা করা উচিত।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, অবশ্যই শিক্ষকদের পাঠদানের মূল্যায়ন করার সু্যোগ দেওয়া উচিত। কারণ শিক্ষকদের একটা বিশাল অংশ আছেন, যারা ক্লাসে কি পড়ান তা হয়তো নিজেই জানেন না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে পারি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনও কিছু শিক্ষক আছেন যারা গ্রামের ইবতেদায়ী মাদ্রাসা বা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের থেকেও পাঠদান যোগ্যতা কম। আবার অনেকে আছেন যে সেচ্ছাচারী আচরণ করে ক্লাসে আসেন না। অনেক বিভাগে দেখা যায়, একজন শিক্ষককে এমন কোর্স দেওয়া হয়েছে, যা সম্পর্কে তার কোনো আইডিয়াই নেই। এমনও বিভাগ আছে, যেখানে শিক্ষক বাটন ফোনের ফাংশনই ঠিক মতো বুঝেন না, কিন্তু তার কোর্সের টাইটেল – “কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং”। শিক্ষকের পাঠদানের মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকলে অবশ্যই এই অবস্থার ভুক্তভোগী কেউ হবে না।
পাঠদান মূল্যায়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক বেলাল হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এটা খুবই একটা জটিল বিষয়। কিছু শিক্ষক যেমন প্রণবন্ত ক্লাস নিতে পারছে না, তেমনি কিছু শিক্ষার্থী আছে, যারা ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করে না বরং কথা বলে অন্যদের ডিস্টার্ব করে। শিক্ষক মূল্যায়ন নিয়ে বিগত প্রশাসনও আলোচনা করেছিল। আশা করি বর্তমান প্রশাসন এটার কার্যকরি ফলাফল তৈরি করবে।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের মূল্যায়নের ব্যাপারটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হওয়া দরকার। আমরা যারা লেকচার দেই, তারা যদি পড়ে এসে লেকচারটা দেই, তাহলে শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট হবে না। বরং তারা উপকৃত হবে। কিন্তু যদি শিক্ষার্থীাদের আনন্দহীনভাবে পড়ানো হয়, তাহলে তারা বোরিং ফিল করবে। কোন শিক্ষক কিভাবে-কতক্ষণ ক্লাস নিচ্ছে, তা মূল্যায়ন করতে পারা অবশ্যই ভালো। আর শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস শুরু এবং শেষ করা উচিত।
শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়নের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সাথে কথা হয়। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম যে মিটিং হয়েছিল, সেখানে প্রথম এজেন্ডাই আমি রেখেছিলাম ‘শিক্ষকদের পাঠদান মূল্যায়ন’। আমরা খুব তাড়াতাড়ি ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়নের ব্যাপারটা বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা করব। অলরেডি এর জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমরা এমন একটি পরিকল্পনা নিয়েছি যেখানে, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঠদান মূল্যায়নের ব্যাপারে কোনো অসামঞ্জস্য পেলে, একটি ম্যাকানিজমের মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা করব।
তারিফুল ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়