রাবি প্রতিনিধি:
পড়াশোনা করেছেন একই বিভাগে। প্রত্যকেই তাদের বিএসসি’র রেজাল্টের জন্য পেয়েছেন ডিনস্ অ্যাওয়ার্ড। একই ল্যাবরেটরি থেকে সম্পন্ন করেছেন মাস্টার্সের থিসিস। এখন তারা উচ্চশিক্ষার জন্যও যাচ্ছেন একই দেশে। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ অদম্য মেধাবীর কথা। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ড স্কলারশিপে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন।
ওই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন, মোহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম, মোছা. মরিয়ম খাতুন, নাজমুল হক কাজল, সেলিম রেজা টনি ও মো. এহসানুল কবির। এর মধ্যে জাহিদ, মরিয়ম ও নাজমুল একই শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী। পাঁচজনই থিসিস সম্পন্ন করেছেন ‘ল্যাবোরেটরি অফ এনভাইরোনমেন্টাল হেলথ সাইন্স’ থেকে। ল্যাবেটরিটা পরিচালনা করেন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও অধ্যাপক অধ্যাপক খালেদ হোসেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে পাঁচ জনই একই ল্যাবে গবেষনার কাজ করতেন। থিসিস পেপার করা ও বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিও সহ নানান বিষয় সবকিছু করতেন একসাথেই। বিএসসিতে তাদের রেজাল্ট প্রায় একই। এমএসসিতে তিনজন পেয়েছেন সিজিপিএ চার। পাঁচজনের প্রত্যকেই তাদের বিএসসি’র রেজাল্টের জন্য সাইন্স ফ্যাকাল্টি হতে ডিন্স এওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মোছা. মরিয়ম খাতুন বিএসসিতে বিজ্ঞান অনুষদের সর্বোচ্চ রেজাল্টধারী হওয়ায় পেয়েছেন স্বর্নপদক।
তাদের মধ্যে নাজমুল হক কাজল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রে তার উচ্চশিক্ষার পথচলা শুরু করে দিয়েছেন। তবে একসাথে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে দুজন বন্ধু (জাহিদ ও মরিয়ম) এবং তাদের জুনিয়র এহসান। কাকতালীয়ভাবে তিনজনই মাস্টার্স এ পেয়েছিলেন সিজিপিএ চার এবং যাচ্ছেনও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রোগ্রামে। আগস্টের ৮ তারিখে তিনজন একই ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। এর মধ্যে জাহিদ ও এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখস হলে থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং আমেরিকাতেও একসাথে বাসা নিয়েছেন।
মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি আমেরিকার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুলফান্ড স্কলারশিপসহ পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছি। যদিও এই রাস্তাটা এতোটাও সহজ ছিলো না এবং এটাও জানি ভবিষ্যতের নতুন জার্নিটাও এতটা সহজ হবে না। তবুও আল্লাহর কাছে অশেষ শোকরিয়া আল্লাহ আমার এবং আমার আব্বা-আম্মার স্বপ্ন পূরন করার তৌফিক দান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, চিরকৃতজ্ঞ আমার সুপারভাইজার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ স্যার এবং কো-সুপারভাইজার অধ্যাপক খালেদ স্যারের প্রতি। উনাদের কারনেই এত বড় স্বপ্ন দেখা এবং আজ সেই কাঙ্খিত স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে। কৃতজ্ঞতা জানাই আমার প্রানপ্রিয় বিভাগ প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞানের সকল শিক্ষকদের প্রতি।
সেই সাথে চিরকৃতজ্ঞ আমার স্কুল গুজাডিয়া এ.এইচ হাইস্কুল এবং গভ. গুরুদয়াল কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতিও, যারা ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। প্রত্যাশা গুলো যখন প্রাপ্তিতে রূপান্তরিত হয় এরচেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।
এহসানুল কবীর বলেন, জীবনের বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। টানা চারমাস এ অনেক চড়াই-উৎরাই, ননস্টপ মেইলিং, তিনটি ইন্টারভিউ ফেস করাসহ অনেকগুলা নির্ঘুম রাতের অবসান ঘটলো। ২০২৪ সাল ইনশাআল্লাহ আরো অনেক কিছু দিবে। এখনো অনেক পথ যাওয়া বাকি, সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।
থিসিস কো-সুপারভাইজার অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই বড় ধরনের একটা সফলতা। তারা তাদের ছোটদেরকে এভাবে সাহায্য করবে। তারই ধারাবাহিকতায় নতুনরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
থিসিস সুপারভাইজার অধ্যাপক খালেদ হোসেন বলেন, ভালো লাগা, ভালোবাসা থেকে আমি এদিকে সময় দিই। আমার এখানের প্রত্যেকটা ছেলে আমাদের পরিবারের সদস্যের মতো। এটা আমার শুধু ভালোলাগা না, আমি নিজেও এখান থেকে প্রতিনিয়ত শিখছি এবং আমি আমার প্রফেশনটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আর আমাদের প্রায় সকল শিক্ষার্থী ফুল ফান্ড স্কলারশিপে যায়। তার মানে, তারা দেশের ক্ষতি করছে না, দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। সরকার সারা বছরে তাদের পিছনে ৫-৬ বছরে যতটুকু টাকা খরচ করে, তারা বিদেশে গিয়ে এক বছরের মাধ্যমে তা পাঠাতে পারে। যেখানে সমাজ পরিবার রাষ্ট্র সবারই উন্নতি হয়।
লেখ তারিফুল ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়