শফিকুল ইসলাম(এম এ)স্টাফ রিপোর্টারঃ-
“আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।” আসমানীর কথা আপনাদের মনে আছে? পল্লীকবি জসীমউদদীনের অমর চরিত্র আসমানী মারা গেছেন। বেঁচে আছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার আর এক আসমানী। এটা কল্প কোন কাহিনী নয়! রক্ত-মাংসের মানুষরূপে বেঁচে আছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আরেক আসমানীর চরিত্র জীবন সংগ্রামী বিধবা মাসুদা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সরকারী রাস্তার পাশে প্রায় দুই যুগ ধরে বসবাস করলেও নজরে আসেসি কোন জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কর্ম-কর্তা ব্যাক্তিদের। জনপ্রতিনিধিদের কাছে বছরের পর বছর ধর্ণা দিয়েও মাসুদার কপালে জোটেনি সরকারী সাহায্যের একটি ঘর বা ঘর তোলার কোন উপকরণ সাহায্য।
সরেজমিনে উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের রাস্তার পাশে বসবাসকারী বিধবা মাসুদা বেগম (৪৮) জানান, এই গ্রামের লাল চান মিয়ার সাথে ত্রিশ বছর পূর্বে একই উপজেলার অশোকসেন গ্রামের মন্নান মোল্লার মেয়ে মাসুদা বেগম এর বিয়ে হয়।
বিয়ের পরে স্বামীর বাড়িতে থাকলেও প্রায় দুই যুগ আগে স্বামী চান মিয়া মারা যাবার পরে বাপের ভিটায় তার জায়গা না থাকার কারনে ওই বছরই মাগুরা বেইলী ব্রিজের পাশে ঝুপড়ি তুলে তাতেই বসবাস করতে শুরু করেন।
মানুষের বাড়ি ঝি’য়ের কাজ করে কোন রকমে পেট চালিয়ে একমাত্র পুত্রসন্তান কাওসারকে নিয়ে শুরু করেন সংগ্রামী জীবন যুদ্ধ।
সারা জীবন অন্যের বাড়ীতে ঝি’য়ের কাজ করে জীবন জিবিকা চালাতে পারলেও বত’মানে করোনা প্রাদুর্ভাবকালে কাজের সুযোগ না থাকায় সংগ্রামী মাসুদা বেগমের বেঁচে থাকার আশা নেই।
কান্না জড়িত কন্ঠে জানান মাসুদা বেগম বলেন, আধাপেটা খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন যাপনকরতে হচ্ছে তাদের। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়- মাথায় নিয়ে ছেলেকে নিয়ে ঝুপড়ির মধ্যে কোন রকমে মাথা গোজেন তিনি। সহস্র ফুটো টিনের ছাউনির ঝুপড়িতে ভাঙ্গা একটা চৌকি ছাড়া চোখে পড়েনি কিছুই। ওই চৌকির উপরেই তার কাঁথ- কাপড়, সহায় সম্বল আর পাতানো সংসার। বর্ষায় পানি পরে ভিজে যায় সবকিছু। বৃষ্টির পানি থেকে নিজেদের রেহাই করতে পলিথিন টাঙ্গিয়ে ভর্ষার রাতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় মাসুদার।
মাসুদা বেগম আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে স্থানীয় মেম্বর, চেয়ারম্যানদের কাছে একটি ঘরের জন্য অনেকবার গিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাকে দেয়া হয়নি কোন ঘর বা ঘরের সহায়তা। তাই বাধ্য হয়ে রোদে পুরে, বৃষ্টিতে ভিজে সরকারী রাস্তার পাশে এই ঝুপড়িতে বসবাস করছেন তিনি।
রাতের গভীরতায় ও নির্জনতায় বেঁচে থাকার আমার প্র তিদিনি ক্ষীণ হয়ে আসছে। অন্ধকারে রাস্তার শিয়াল, কুকুরের ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে হয় তাকে। মাসুদা আক্ষেপ করে বলেন, দয়ালু প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর দেয়, কিন্তু কোন মেম্বর-চেয়ারম্যান বা প্রশাসনের স্যারেরা একটি ঘর দেয়নি আমাকে।
মাগুড়া এলাকার বসবাসকারী সংশ্লিষ্ঠ রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস তালুকদার বলেন, এমন অসহায় একটি পরিবারের কথা তার জানা ছিলনা। তবে জরুরী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পারিরকে সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন ইসলাম চৌধুরী জানান, বিধবা দরিদ্র মাসুদা বেগম যদি আশ্রায়ন প্রকল্পে থাকতে চায় তাহলে তাকে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যথায় যদি ওই অসহায় নারী ৫ শতাংশ জায়গা সংগ্রহ করতে পারেন তবে তাকে একটি ঘর সরকারী দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি