আমরা অনেকেই জানি খেজুর খাওয়া সুন্নত, আবার এই একটি সুন্নতের পেছনেও আছে অনেক উপকারিতা আর এই সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না।
রোজা শেষে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনেরও জোগান দেওয়া ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খেজুরের গুরুত্ব অপরিসীম। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে যে উপকারগুলো হয় তা জেনে নিন……
খেজুরে আছে প্রচুর শক্তি, এমিনো এসিড, শর্করা ভিটামিন ও মিনারেল। প্রতিদিন রোজায় আমাদেরকে দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকতে হয় যার কারণে আমাদের দেহে প্রচুর গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন এই খেজুর আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজের ঘাটতি যোগান দিতে সাহায্য করে। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক খেজুরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা-
কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট – খেজুরে কোন কোলেস্টেরল এবং বাড়তি পরিমাণে চর্বি থাকে না। যার ফলে আপনি যখন সহজেই খেজুর খাওয়া শুরু করবেন তখন অন্যান্য ক্ষতিকর ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
প্রোটিন – আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। খেজুর হল প্রোটিন সমৃদ্ধ। ফলে আমাদের পেশী গঠন করতে সহায়তা করে এবং শরীরের জন্য খুব অপরিহার্য প্রোটিন সরবরাহ করে।
ভিটামিন – খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক। যেমন, বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এছাড়াও ভিটামিন এ১ এবং সি ভিটামিন পাওয়ার আরও একটি সহজ মাধ্যম হচ্ছে খেজুর। সেই সাথে খেজুরে দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও খেজুর অত্যন্ত কার্যকর।
আয়রন – আয়রন মানব দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খেজুর প্রচুর আয়রন রয়েছে। ফলে এটা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই যাদের দুর্বল হৃৎপিণ্ড, তাদের জন্য খেজুর হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ ওষধ।
ক্যালসিয়াম – ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত করে। খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।
ক্যানসার প্রতিরোধ – খেজুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা যায়, খেজুর পেটের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। আর যারা নিয়মিত খেজুর খান তাদের বেলায় ক্যানসারে ঝুঁকিটাও কম থাকে। খুব সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে খেজুর Abdominal ক্যান্সার রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটি অনেক সময় ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে।
ওজন হ্রাস – মাত্র কয়েকটা খেজুর কমিয়ে দেয় ক্ষুধার জ্বালা। এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কয়েকটা খেজুরই কিন্তু শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ। যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। কখনও কখনও ডায়রিয়ার জন্যেও এটা অনেক উপকারী।
সংক্রমণ – যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এছাড়া গলা ব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি, এবং ঠাণ্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহল জনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়ায় দ্রুত কাজ করে।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ – প্রচুর মিনারেল সঙ্গে আয়রন থাকার কারণে খেজুর রক্তশূন্যতা রোধ করে। তাই যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা নিয়মিত খেজুর খেয়ে দেখতে পারেন।
কর্মশক্তি বাড়ায় – খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদাররা যদি মাত্র ২টি খেজুর খান তবে খুব দ্রুত কেটে যাবে তাদের ক্লান্তি।
স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায় – খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকার কারণে এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্র-ছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভাল থাকে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ – খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম যা বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর শরীরের খারাপ ধরণের কোলেস্টেরল কমায় (LDL) এবং ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।। খেজুরের উপকারিতাগুলো তো জানলেনই, তাই শুধু রমজান মাসেই নয়, আমাদের খেজুর খাওয়া উচিত সারাবছর, প্রতিদিন।
লেখক: ইশরাত জাহান, প্রধান পুষ্টিবিদ, বিআরবি হসপিটাল।