31.9 C
Bangladesh
Thursday, February 20, 2025
spot_imgspot_img
Homeগল্পসবার বসন্তের ফুল ফুটে না

সবার বসন্তের ফুল ফুটে না

লেখকঃ মোঃ ফেরদৌস মোল্লাহ্

ঝুমুর তার ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই শান্তশিষ্ট প্রকৃতির মেয়ে। ঝুমুর ছোটবেলা থেকেই এমন একটা গুনে গুণান্বিত ছিল যে সে সর্বদাই সকলের সাথে অনায়াসে মিশে যেতে পারতো। ঝুমুরের বাবা একজন চাকরিজীবী। মা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। শহরেই ঝুমুরের বেড়ে ওঠা। ঝুমুর তার স্কুলের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে নানা বাড়ি বেড়াতে আসে। চারদিকে কাটফাঁটা রোদে মানুষরা হাহাকার করছে। তখন ঝুমুরের নানুর বাড়িতে ইটের ঘর তৈরি করার জন্য রাজমিস্ত্রী আসলো। সকাল বেলা টুকটাক শব্দতে ঝুমুরের ঘুম ভাঙলো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাহিরে বের হল হাতে একটা তোয়ালে নিয়ে। হঠাৎ চোখ পরলো একটা ছেলের দিকে।ছেলেটাও ঝুমুরের দিকেই তাকিয়ে রইলো আনমনে। ঝুমুর একটু বিব্রত মনে করে চোখ সরিয়ে নিল। ঝুমুর ঘরে এসে তার নানির কাছে প্রশ্ন করলো নানি আফু ওই ছেলেটি কে? নানি বলে উঠে,” ও তো হল তোর মিলন মামার ছেলে আকাশ। ও ছোট বেলা থেকেই শহরে থেকে লেখাপড়া করে তাই তুই আর ওরে দেখছস নায়।”
ঝুমুর দুপুরে খাওয়া শেষে বাহিরে বের হয়ে মনে মনে আকাশ কে খুঁজতে থাকে কারণ আকাশকে ঝুমুরের প্রথম দেখাতেই একটু একটু ভালো লাগছিলো।
বিকেলে আকাশের বন্ধুরা খেলাধুলা করার জন্য আকাশ কে ডাকতে আসে। তখন আকাশ ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে ঝুমুরকে দেখতে পায়।আকাশ ও ঝুমুরে দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝুমুরও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এগুলো আকাশের বন্ধুরা ফলো করলেও কিছু জিগ্যেস না করে ওরে নিয়ে চলে যায়।সন্ধ্যায় যখন আবারও ঝুমুরে সাথে দেখা দুইজনে সামনাসামনি হয়, তখন ঝুমুর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আপনার নাম কী?” আকাশ তখন বললো,” আমার নাম আকাশ। তোমার নাম কী?” ঝুমুর বলে, “আমার নাম ঝুমুর। আমি আপনার শিরিন আন্টির মেয়ে। আচ্ছা, আকাশ ভাইয়া আমাকে একটু আগামী কাল গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবেন।”আকাশ রাজি হয়ে বললো, “আমি তো ছোট বেলা থেকেই গ্রামের বাহিরে থাকি তারপরও যতটুকু চিনি আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবো।”পরের দিন বিকালে আকাশ ঝুমুর কে ডেকে বলে,” চলেন ঘুরতে যাই গ্রামে।” ঝুমুরও রেডি হয়ে আকাশে সাথে বের হলো। ঝুমুর আকাশকে বলল,” ভাইয়া আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন কারণ আমি আপনার থেকে অনেক ছোট হবো।” আকাশ কিছু না বলেই হাঁটতে ছিলো এবং ঝুমুরকে বিভিন্ন স্থান দেখাচ্ছিল। সন্ধ্যায় আবার বাড়ি ফিরে এলো। এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে গেলো।একদিন হঠাৎ আকাশ ঝুমুর কে বলে,” আচ্ছা একটা কথা বলবো!”ঝুমুর বলে,” আচ্ছা বলেন।” আকাশ বলে,” আমার তোমাকে প্রথম দিন দেখেই ভালো লাগেছিলো।”ঝুমুর লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মৃদু মৃদু কন্ঠে বলে, “আমিও আপনাকে অনেক পছন্দ করি।” এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়। তাদের মধ্যে আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।ঝুমুরের ছুটি শেষ, ঝুমুর তার শহরে চলে গেলো।পরে তাদের দুইজনের মধ্যে ফোনে কথা হতো।
ঝুমুর ফাইনাল পরীক্ষা শেষেই আবারও নানু বাড়িতে ছুটে আসে। আবারও আকাশের সাথে দেখা কথা হওয়া একসাথে ঘুরে বেড়ানো।আকাশ এর ফাঁকে ফেসবুকে অন্য কয়েকটি মেয়ের সাথে কথা বলতো। এটা নিয়ে ঝুমুরের সাথে একটু ঝগড়া হয়।পরে আকাশ আবার বুঝিয়ে ঝুমুরকে শান্ত করে।
আকাশ একটা ব্লাড সংগঠনে সাথে সংযুক্ত হয় এবং ঝুমুরকেও সেই সংগঠনের সাথে যুক্ত করে।সংগঠনের মাধ্যমে অনেক সাথে পরিচিত হয়।আকাশ সংগঠনের একটা মেয়ের সাথে কথা বলে যেটা নিয়ে ঝুমুর নিষেধ করে এবং সবাইকে জানালে আকাশ তা থেকে ফিরে যায়। ঝুমুর ও আকাশ তারা দুইজনেই সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বসন্তের প্রথম দিন তথা পহেলা বৈশাখ বিয়ে করবে। সব কিছু ঠিক ঠাক। কিছু দিন পরই তাদের বিবাহ।একদিন ঝুমুরের কাছে একটা ফোন আসে যে এক ব্যাগ এ পজিটিভ ব্লাড প্রয়োজন। ঝুমুর আকাশকে সাথে নিয়ে রোগীকে ব্লাড দিয়ে আসে। ফেরার পথে ইজিবাইক ব্রিজের ডাল থেকে নামার পথে উল্টো হয়ে পরে যায়।গাড়ির নিয়ে ঝুমুর পরে বুকে ও মাথায় আঘাত পায়।দ্রুত তাকে তাত্ক্ষণিক ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়। ডাক্তার তাকে দ্রুত ঢাকায় ডাক্তার রেফার করে। সাথে সাথেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
দুই দিন ট্রিটমেন্ট করার পরে একটু সুস্থ হয়ে উঠে।
আকাশ রুমে গিয়ে হাত ধরে বলে,” ঝুমুর তুমি চিন্তা কইরো না। কাল পহেলা বৈশাখ তাতে কী হয়েছে? তুমি সুস্থ হও। তার পরে আমার বিয়ে করবো।”ঝুমুর কিছু বলতে পারছে না। শুধু চোখের কোনা দিয়ে পানি বেরিয়ে পরছে।আকাশ টিস্যু দিয়ে পানি মুছে দিয়ে রুম থেকে বের হয়।
পরের দিন আকাশ একটা ফুলের তোড়া নিয়ে একটা পাঞ্জাবি পরে হসপিটালের দিকে রঅনা দেয়। রুমের সামনে গিয়েই শোনে ঝুমুর আর নেই, কিছুক্ষণ আগেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।ঝুমুরের মা বাবা আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ব্যেঙ্গে পরেন।
আকাশের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা পরে যায়।আকাশের চোখ থেকে পানি অনবরত ঝরতে থাকে।আকাশ রুমে ডুকে ঝুমুরে পাশে বসে বলে,” সবার কপালে বসন্তের ফুল ফুটে না।”

Most Popular

Recent Comments