মোঃ আশিকুর রহমান আব্দুল্লাহ ; সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েই চলছে ক্ষুধার্ত বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব। এতে অতিষ্ঠ পথচারী বৃৃদ্ধসহ কোমলমতি শিশুরাও। এদিকে গত ৩ মাসে জেলায় কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন শিশু ও নারীসহ ১১০০ জন। তারা সকলেই জলাতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে ‘র্যাবিস ভ্যাকসিন’ গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে অন্যান্য প্রাণির কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯৯ জন।
শহর ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, কলেজ মোড়, ফুড অফিসের মোড়, পোস্ট অফিসের মোড়, জুবলি স্কুল মোড়, নবারুণ স্কুল মোড়, পিটিআই মোড়, পলাশপোল স্কুল মোড়, সুলতানপুর বাজার, ইটাগাছা, কামালনগর, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, আনন্দপাড়া, শিবতলা মোড়, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনী, থানাঘাটা, মিল বাজার এলাকায় কুকুরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ফুড অফিসের মোড় ও পোস্ট অফিসের মোড় এলাকায় দল বেঁধে ১৫ থেকে ২০টি কুকুর ঘোরাঘুরি করে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সন্ধ্যা নামলেই বাড়ছে কুকুরের উপদ্রব। পথচারীদের গতিরোধ করে দাঁড়াচ্ছে কুকুরের দল।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ৪৬৪, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩২৪ ও মার্চ মাসে ৩১২ জন কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। এছাড়াও অন্যান্য প্রাণির কামড়ে জানুয়ারি মাসে ১৬৩, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭৯ ও মার্চ মাসে ১৫৭ জন আক্রান্ত হয়ে সেবা গ্রহণ করেন। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। আরও জানা যায়, কয়েকদিন পূর্বেও সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কুকুর ও বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে আসা ১২০ থেকে ১৮০ জন রোগীকে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন (টিকা) দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারের অধিক কুকুর রয়েছে। সম্প্রতি ওই কুকুরগুলো ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পথচারীদের কামড় দিয়ে আহত করছে। কিন্তু পূর্বের মতো এখন আর ওই কুকুরগুলো মেরে ফেলার নির্দেশনা নেই। সেজন্য তাদেরকে না মেরে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হচ্ছে। ওই কুকুরের টিকা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমরা শুধু টেকনিক্যাল সার্পোট (কারিগরি সহায়তা) দিয়ে থাকি। তবে কেন কুকুরের জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা বন্ধ আছে তা আমি বলতে পারব না।
এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. শাফায়াত হোসেন জানান, সরকারি নির্দেশে কুকুর মারা ও প্রতিষেধক ভ্যাকসিন (টিকা) সরবারহ বন্ধ আছে। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ রেভিস ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিন সংকটের কোনো কারণ নেই।
শহরে কুকুরের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি জানান, প্রতিবছর পৌর কর্তৃপক্ষ কুকুর নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করতো। কিন্তু কুকুর নিধন চালানো বন্ধে হাইকোর্টে রিটের কারণে ২০১৮ সালের শুরু থেকে তা বন্ধ আছে। এরপর থেকে ভ্যাকসিন বাবদ কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এখন কুকুরের ‘ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচিও’ বন্ধ রয়েছে।
শিশু অয়নের মা জানালেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির বাইরে অন্য ছেলেদের সঙ্গে খেলছিল অয়ন। হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে কুকুরটি এসে হাতে ও পায়ে আঁচড় কাটে। সেই সঙ্গে বাঁ হাতের বাহুর ওপরের অংশ খামচে মাংস তুলে ফেলে। হাসপাতালে যেয়ে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নিয়ে এসেছি। এমন ঘটনায় জেলার শতশত পথচারীও আক্রান্ত হচ্ছে। ওই কুকুরগুলোর কামড় থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পথচারী জানান, একটি জনবহুল জেলা সাতক্ষীরা। এই জেলার ৭ টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ৭৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় প্রায় ১৫ হাজারের অধিক কুকুর রয়েছে। ওই কুকুরগুলো মহামারির সময়ে ব্যাপকতর খাদ্য সংকটে পড়ে দিনদিন হিং¯্র হয়ে উঠেছে। এবং আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কামড় দিয়ে আহত করছে। বাইরের কাজ সেরে রাতে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া খুবই মুশকিল আমাদের। ওই কুকুরগুলোর হিংস্রতা বন্ধের জন্য জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।