মোহাম্মাদ রতন,পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
ফারজানা আক্তার মিঠাপুকুর ১৩নং শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের বাবা মোঃ রেজাউল সরকার (৫৯) ও মা মোছাঃ নরুতাজ বেগমের(৪৭) চার কন্যা সন্তানের মধ্যে সবার বড় ফারজানা।এবার এসএসসি পরীক্ষায় ভেন্ডাবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তির্ণ হয়েছে।গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া এই কিশোরী এর আগেও পিএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ ৫.০০ পেয়েছিল।সরেজমিনে ফারজানার বাড়িতে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ।শত প্রতিকূলতার মাঝেও কতটা ইচ্ছাশক্তি থাকলেও এত ভালো রেজাল্ট করা যায় ফারজানা তার দৃষ্টান্ত।বাড়িতে একটি মাত্র ঘর।নেই পড়ার টেবিল। মাটিতে চটি বিছিয়ে হারিকেনের আলোয় সে পরতো। বাড়িতে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। টিউবওয়েলও নেই,অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে,সেই পানি দিয়ে খাবার ও গোসলের কাজ সারতো সে।তাকে প্রশ্ন করা হয় কেনো ডাক্তার হতে চান?সে বলে আমি তো গরীব,গরিবের দুঃখ আমি বুঝি। আমি গরিব মানুষকে চিকিৎসা দিতে চাই।একই সাথে বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।কিভাবে এত ভালো রেজাল্ট করলেন ?প্রশ্ন করলে ফারজানা জবাব দেয় বাবা-মা জীবিকার জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করে। আমি ঠিকভাবে বইও কিনতে পারতাম না। বন্ধুর বাবা আমাকে বই কিনে দিয়েছিল। নিজের বাড়িতে বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা না থাকায়,পাশের বাড়িতে মাঝে মাঝে গিয়ে কারেন্টের আলোতে পড়তাম ।সে সুযোগ হয়তো সব সময় থাকতো না।হারিকেনের আলোয় বেশিরভাগ সময় পড়া হতো।আর সেই সময়গুলোতে বৃদ্ধ দাদী আমার পাশে বসে থাকতেন।দাদির অবদান অতুলনীয়।ফারজানা কে প্রশ্ন করা হয়? পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় তো অনেক ব্যয়বহুল এটা নিয়ে আপনার ভাবনা কি?জবাবে সে বলে আমি কোন কলেজে ভর্তি হব সেটাও জানিনা,কিভাবে সামনের পথগুলো পাড়ি দেবো তাও বুঝতে পারছিনা।তবে সবার সহযোগিতা পেলে আমি অবশ্যই এই ফলাফল অব্যাহত রাখতে পারব ।এবং আমি ডাক্তার হব ইনশাল্লাহ।
ভেন্ডাবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেনঃফারজানা অত্যন্ত মেধাবী। তিনি বলেন সবার সহযোগিতা পেলে গরীব মেধাবী এই মেয়েটি ভবিষ্যৎতে অনেক ভাল কিছু করবে।ফারজানার অভিভাবক হিসেবে তার বৃদ্ধ দাদী বিধবা ফেরেজা বেগম।সরকারের প্রতি এবং সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেনঃ যেন অর্থের অভাবে তার মেধাবী নাতবীর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে না যায়। তিনি ফারজানার জন্য দোয়া ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।