তাহসীন আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক::
দশকের পর দশক ধরে নির্যাতিত ফিলিস্তিনি মজলমুদের প্রতিবাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল পাথর বা ইটের টুকরো। অথচ গাজার সশস্ত্র বাহিনী হামাস ৭ অক্টোবর মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট নিক্ষেপ করে ইসরাইলে। যেগুলো নির্মাণে খরচ পড়ে গড়ে দু’শ ডলারের মতো। মনে প্রশ্ন জাগে না কীভাবে তারা আজ এতএত রকেট, মিসাইল, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা ড্রোনের মত আধুনিক সব অস্ত্রের অধিকারী হলো? কে তাদের এসব দিল? কীভাবে তারা এ প্রযুক্তি পেল?
হাসান তেহরানি। যার জন্ম, বেড়ে উঠা এবং পড়ালেখা ইরানেই। পেশায় একজন শিল্প-প্রকৌশলী হলেও ১৯৭৯ এ ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারিতে অংশগ্রহণ করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এই দূরদর্শী বীর। তারপর মাত্র ২১ বছর বয়সেই যোগ দেন ইরানের ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা বিভাগে। তখন থেকেই তার অন্যতম ইচ্ছে ছিল ইসরাইলকে ধ্বংস করা। তার দক্ষতার জন্য ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় ইরানের মিসাইল ল্যাবের প্রধান হিসেবে। এই পর্যায়ে এসে তেহরানী ইসরাইলকে ধ্বংসের জন্য উঠে পড়ে লাগে। রাশিয়ার একটি মিড রেঞ্জের মিসাইলকে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তার মিসাইল আবিষ্কারের পথ উন্মোচিত হয়। খ্যাতি অর্জন করেন ইরানের মিসাইল প্রযুক্তির জনক হিসেবে । সর্বপ্রথম ৬০ কিলোমিটার রেঞ্জের ‘নাজিয়াত’ বোমা থেকে বর্তমানের হাজার মাইলের ‘ফাত্তাহ মিসাইল’ তারই গবেষণার ধারাবাহিকতার ফসল।
হাসান তেহরানি কখনো ইসরাইলে হামলা করেনি, কিন্তু তিনি তাদের বিরুদ্ধে দু’টাে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মিসাইল প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং তার জ্ঞান ইসরাইল বিরোধী গোষ্ঠী যেমন হামাস, হিজবল্লুাহর মত সশস্ত্র দলগুলোর মাঝে ভাগাভাগি করা ও ছড়িয়ে দেওয়া। তেহরানির অন্যতম একটি দর্শন হচ্ছে “জ্ঞানকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যাবে না” তাই ইসরাইল বিরোধীদের অস্ত্র দেওয়ার চেয়ে অস্ত্রের জ্ঞান ও তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া বেশি কার্যকর। এতে খরচ কম, ঝুঁকিও কম এবং সেই তুলনায় সফলতা বেশি। তার এই দূরদর্শী পরিকল্পনার জন্যেই আজকে ইসরাইলের চারিদিকে এতএত মরণকামড় অপেক্ষা করছে ইসরাইলকে দংশন করার জন্য। হাসান তেহরানীর দর্শনকে কাজে লাগিয়েই আজ ইরান তাদের মিসাইল প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিয়েছে লেবাননের হিজবল্লুাহ ও ইয়েমেনের হুথিদের মাঝে। লেবানন, গাজা ও ইয়েমেনকে হাসান তেহরানির মিসাইল প্রযুক্তির তিন পরীক্ষাগার বলা হয়।
২০১১ সালের ১২এ নভেম্বর এক রহস্যজনক বিস্ফোরণে ১৭জন ইরানি সেনাসহ তিনি নিহত হন। টাইম ম্যাগাজিনের সূত্র মতে মোসাদ এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যদিও ইরান তা অস্বীকার করেছে। তাদের ভাষ্য মতে এটি একটি দূর্ঘটনা ছিল। মৃত্যুর আগে তেহরানি বলে গিয়েছিলেন তার কবরের এপিটাফে যেন লেখা থাকে : “রুয়ি কবরম বানোয়ে সেয়েদইনজা মদফন কস আস্ত কে মি খোয়াস্ত ইসরাইল মারা নাবদু কন্দ” অর্থাৎ এখানে এমন একজন শুয়ে আছেন, যিনি ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চাইতেন।
তাহসীন আহমেদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১ মে, ২০২৪